মালিকুজ্জামান কাকা
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা ও তাদের পরিবারের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে সাতটি গাড়িতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য শহরের বিভিন্ন স্থানে এই অভিযান পরিচালনা করে।
পুলিশের দাবি, তারা কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে অভিযান চালায়নি। অস্ত্র, মাদক ও মামলার পলাতক আসামিদের ধরতেই এ তৎপরতা চালানো হয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে বলছেন, দিনের বেলায় পুলিশি অভিযানে এলাকায় এক ধরনের উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযান চলাকালে বিভিন্ন নেতার বাড়ির সামনে লোকজনের ভিড়ও দেখা যায়।
পুলিশ প্রথমে শহরের কাজীপাড়া কাঁঠালতলায় শাহীন চাকলাদারের পোড়া বাড়িতে যায়। এই বাড়িটি সম্প্রতি ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের সময় আগুনে পুড়ে যায়। বর্তমানে সেখানে তিনি বা তার পরিবার বসবাস করেন না। সংস্কারের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ সেখান থেকে চলে যায়।
পরে পুলিশ পর্যায়ক্রমে যান পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর-যুবলীগ জেলা প্রচার সম্পাদক জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলনের বাড়িতে, এরপর লিচু বাগান এলাকার যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম জুয়েলের বাড়ি, কাজীপাড়ায় জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুলের বাড়িতে অভিযান চালায়।
যুবলীগ নেতা জুয়েলের ভাবি জ্যোৎস্না বেগম বলেন, ‘পুলিশ আমাদের বাসায় এসে জুয়েলের খোঁজ নেয়। আমরা জানাই, তিনি অনেক আগেই বাড়ি ছেড়েছেন। এরপর পুলিশ ফিরে যায়, কাউকে কিছু বলেনি।’
অভিযানে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নেতাদের বাড়িতে মামলার আসামিরা থাকতে পারে এমন তথ্যের ভিত্তিতে তারা সেখানে গিয়েছেন। কাউকে না পেলেও এমন অভিযান চলবে বলে জানান তিনি।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, ‘এটি কোনো দলীয় অভিযান নয়। নিয়মিত মাদক ও অস্ত্রবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে পুলিশী এই তৎপরতা।’
আওয়ামী লীগের কয়েক জন নেতা-কর্মী জানান, সাম্প্রতিক সময়ের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় দলের ঝটিকা মিছিলের প্রেক্ষাপটে এই অভিযান চালানো হয়েছে।
যশোর শহরের কাজীপাড়া, পুরাতন কসবা, বারান্দিপাড়া, সিটি কলেজপাড়া, চাঁচড়া রায়পাড়া, বিরামপুর, উপশহর, খোলাডাঙ্গা, ধর্মতলা, পালবাড়ি, ষষ্টিতলাপাড়া, শংকরপুর, রেলগেট, বেজপাড়া, আরএন রোড, খড়কী, কারবালা এলাকাসহ কয়েকটি স্পটে নেতাকর্মীর বাড়িতে অভিযান পারিচালিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মনজুরুল হক জানান, বিভিন্ন মামলার আসামি আটক করতে অপরাধ সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। বিশেষ করে মাদক কারবারি সন্ত্রাসী, বিভিন্ন মামলার আসামি ও নানা অভিযোগে অভিযুক্তদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। শুধু আওয়ামী ঘরানার লোকজনের বাড়িতে অভিযান চলছে এমনটি নয়। অভিযান চলমান। অভিযানে আটককৃতদের তথ্য পরে জানানো হবে। চলমান পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেট গুলোর দিকেও নজরদারি করছে পুলিশ। সুনিদিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদে বিরুদ্ধে এই অভিযান চলছে। মাদক ব্যবসায়ীসহ সব ধরণের অপরাধী আটক ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুনঃ দাবি পূরণ করেই ছাত্ররা ক্লাসরুমে ফিরবে নওগাঁর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা
Leave a Reply