মোহাম্মদ দুদু মল্লিক শেরপুর ব্যুরোঃ’ দৈনিক দেশ রূপান্তর’ পত্রিকার শেরপুরের নকলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাত দিন আগে সাজা দেয়া হলেও আজও মিলেনি তার সাজার রায়ের কপি। ফলে এখনো আপিল করতে পারেনি রানার পরিবার।উল্লেখ্য,নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি প্রকল্পের তথ্য চেয়ে আবেদন করেন সাংবাদিক রানা।গত ৫ মার্চ মঙ্গলবার তিনি আবেদনের রিসিভ কপি চাইতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। কিন্তু কপি না দিয়ে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, কাগজপত্র তছনছ ও একজন নারী কর্মকর্তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে রানাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিহাবুল আরিফ। এ ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে,তথ্য চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় আপিলের উদ্দ্যেশ্যে সাজার আদেশের অনুলিপি পেতে শনিবার সকাল ৯ টায় শেরপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান রানার স্ত্রী বন্যা আক্তার। এ সময় তার সাথে রানার পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য ছিলেন। কিন্তু দিনভর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অপেক্ষা করেও আদেশের অনুলিপি পাননি।পরে হতাশ হয়ে রানার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা ফিরে যান।এদিকে ওইদিন সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, নকলার ইউএনও কে সাজার আদেশের অনুলিপি পাঠানোর বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিছুক্ষনের পড়ে ইউএনও বলেন, সাজার নথি পাঠানো হয়েছে।এ খবর শুনে আইনজীবী ও রানার পরিবারের সদস্যরা আপিলের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তবে,সাড়ে তিন ঘন্টা অপেক্ষা করলেও সেই নথি দেখা মিলেনি।এ বিষয়ে জানতে দুপুর পৌনে দুইটার দিকে কয়েকজন সাংবাদিক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়া হয়।এসময় জেলা প্রশাসক বলেন,আইনের বিধান অনুযায়ী তিনি (রানা) সব রকমের আইনি সুবিধা পাবেন।আপিলের জন্য সাজার নথি কেন দেওয়া হচ্ছেনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আপনারা জানেন তথ্য কমিশনার বিষয়টি অনুসন্ধানে এসেছেন। তাই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।এদিকে এ ঘটনাটি তদন্ত করতে আসা তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক এঁর কাছে রায়ের কপি না পাবার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘মামলার সাজার কপির সঙ্গে আমাদের অনুসন্ধানের কোনো সম্পর্ক নেই।এদিকে সাজার আদেশের কপি পেতে রানার পরিবারের পক্ষে করা আবেদনে ঘষা মাজা করে কপি পাওয়ার তারিখ ১০ দিন পিছিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাদের দাবি,গত ৭ মার্চ রানার পরিবারের পক্ষে তার স্ত্রী নকলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাবুল আরিফ বরাবর কপি চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনটি গ্রহণ করে আদেশের কপি প্রদানের তারিখ লেখা হয় ১০ মার্চ। পরে তা ঘষামাজা করে ১০ মার্চকে ২০ মার্চ করা হয়।ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করতে এসে গত ১০ মার্চ রবিবার শেরপুর জেলা কারাগারে প্রায় ২ ঘন্টা ধরে রানার বক্তব্য রেকর্ড করেন তথ্য কমিশনার মো. শহিদুল আলম ঝিনুক। পরে তিনি দুপুরে রানার বাসায় গিয়ে তাঁর স্ত্রী বন্যা আক্তার ও ছেলে মাহিমের সাথে দেখা করে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করেন। এসময় তার স্ত্রীর কাছ থেকে তথ্য আধিকার আইনে সাংবাদিক রানার করা আবেদনের দুটি কপিও সংগ্রহ করেন তিনি।পরে বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে তিনি ইউএনও’র কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর গোপনীয় শাখার সহকারী (সিএ) শিলা আক্তারের সাথে, ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন ও সাজা প্রদানকারী কর্মকর্তা নকলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিহাবুল আরিফ এর সাথে প্রায় তিন ঘন্টা কথা বলেন ও মামলার নথি পর্যবেক্ষন করেন।
এদিকে তথ্য কমিশনারের আগমনের খবর পেয়ে আগে থেকেই ইউএনও কার্যালয়ের সামনে অফিসের কাজ ফেলে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সন্ধায় তথ্য কমিশনার ইউএনও কক্ষ থেকে বের হলে তাঁর সাথে কথা বলতে চেষ্টা করেন সমবেত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মী,বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্য ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা তাঁকে ঘিরে ধরে কথা বলতে চেষ্টা করলেও তথ্য কমিশনার তাদের সাথে কোন কথা বলেননি।এ ব্যাপারে,রানার স্ত্রী বন্যা আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে সম্পুর্ণ বিনা দোষে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে। এখন আপিলের জন্য রায়ের কপি চেয়ে আবেদন করেও কপি পাচ্ছিনা। রায়ের কপি না দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমাদের কি রায়ের কপি পাওয়ার অধিকার নেই?আমি আমার ছেলে মেয়েদের নিয়ে মানবেতন জীবন যাপন করছি। আমি আমার স্বামীর দ্রুত মুক্তি চাই।”তিনি আরও বলেন, “উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডের কমিটি না থাকায় ভারপ্রাপ্ত কমান্ডারের দ্বায়িত্বে আছেন ইউএনও। তিনি মদদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধাদের একটি অংশকে মাঠে নামিয়ে মুল ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন।এবিষয়ে বক্তব্য জানতে আজ সোমবার সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত নকলার ইউএনও এঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকরা অপেক্ষা করলেও ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন ও তার সিএ শিলা আক্তারকে তাঁদের কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply