মাহবুবুজ্জামান সেতু,নওগাঁ প্রতিনিধিঃ আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি চলে যাচ্ছি মিজানুরের সঙ্গে……। এমন একটি লেখা সংবলিত চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার ১২ নং কাশোঁপাড়া ইউনিয়নের তুলশিরামপুর (মধ্যপাড়া) গ্রামের নিহত জনি আক্তারের শয়ন ঘর থেকে এ চিরকুটটি উদ্ধার করে মান্দা থানা পুলিশ ।
এর আগে সকাল ১০ টার দিকে তুলশিরামপুর মধ্যপাড়ার জনৈক আব্দুর রহমানের একটি ইউক্যালিপ্টাসের বাগান থেকে জনি আক্তার (১৭) এবং আরিফ হোসেন (২২) নামে দু’জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত জনি আক্তার তুলশিরামপুর (মধ্যপাড়া) গ্রামের হাফিজুল ইসলামের মেয়ে এবং আরিফ হোসেন একই গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে ।
মেমোরিতে গান লোড দিতে গিয়ে বন্ধুর বাড়িতে থাকার অযুহাতে ওইদিন রাতে আরিপ বাড়িতে না আসায় এবং গভীর রাতে জনি আক্তার পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের দু’জনের অনাকাঙ্খিত মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এটি আসলে আত্মহত্যা না কি হত্যা? আর সে কারণে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাটি সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে নায্য বিচার দাবি করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এসব বিষয়ে জানার পর অপরাধীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।খুব শীঘ্রই আসল রহস্য উন্মোচন হবে বলে স্থানীয়দের প্রত্যাশা।
নিহত জনির মা এবং বাবাসহ অন্যান্যদের দাবি যে, জনি আক্তার তার নানার বাড়ি থেকে দোয়ানী দাখিল মাদ্রাসায় লেখাপড়া করত। এবারে সে ওই মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সহিত পাশ করে। আরিপ ও জনির মধ্যে কোন প্রেমের সম্পর্ক নেই এবং তাদের উভয় পরিবারের সঙ্গে কোন শত্রুতা নেই। আরিপের মোবাইল চেক করলেই সবকিছু তথ্য বেরিয়ে আসবে। ও তো একটা পুরুষত্বহীন (খোঁজা) ছেলে। ও তো কখনো বিয়ে করতে পারবে না। সম্প্রতি আরিপের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী চকউলী এলাকার মিজানুর নামের এক ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে জনির। আর এ কাজে ঘটকালী করতো আরিপ। তাহলে ও কেনো জনিকে নিয়ে পালাতে যাবে। তবে ও হয়তো তার বন্ধু মিজানুরের প্রলোভনে পরে কৌশলে জনিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগীতা করতে গিয়ে মাঝপথে তারা দু’জনে পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। অথচ, এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল মূল বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করছেন।
নিহত আরিপের মা ছাবিনা খাতুন বলেন, রোববার বিকেলে আরিফ স্থানীয় সিংগীহাট বাজারে দেলোয়ারের দোকানে মেমোরিতে গান লোড দিতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর বাড়ি না ফেরায় রাত ১০টার দিকে তার মা ফোন করে সে কোথায় আছে, তা জানতে চান। ওইসময় আরিফ জানিয়েছিলেন যে, তিনি তার এক বন্ধুর বাড়িতে আছেন। সকালে বাড়ি ফিরবেন।
অন্যদিকে জনির মা বানেছা বেগম বলেন, রোববার রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে সাড়ে ১০টার দিকে তিনি এবং তার মেয়ে একই ঘরে ঘুমাতে যায়। ভোরে তাকে বিছানায় দেখতে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে তুশশিরামপুর (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের আব্দুস সামাদ নামে এক ব্যাক্তি ঝড়াবিলায় মাছ ধরতে গিয়ে তুলশিরামপুর মধ্যপাড়ার জনৈক আব্দুর রহমানের একটি ইউক্যালিপ্টাসের বাগানে জনি আক্তার এবং আরিফ হোসেনের মরদেহ দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে তারা সেখানে ছুটে যান। এরপর সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মান্দা থানা পুলিশের একটি দল এসে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ দু’টি উদ্ধার করে।
নিহত আরিফ হোসেনের বাবা আব্দুল করিম বলেন, তার ছেলে ছোট বেলা থেকেই পুরুষত্বহীন। পরিনত বয়সে ও শারিরিক অক্ষমতার কারণে সে কখনো বিয়ে করার মত পরিস্থিতিতে ছিলো না। তাকে সুস্থ করার জন্য আজ থেকে কয়েকবছর আগে একবার অপারেশন করা হয়। পূনরায় অপারেশন করতে প্রায় লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
পরবর্তীতে শারিরিক অক্ষমতা নিয়েই সে ২০১৯ সালে দোয়ানী দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার পর লেখাপড়া বাদ দিয়ে অদ্যবধি নিজ বাড়িতে কৃষি কাজ করত। আরিপ এবং জনি আক্তারের মধ্যে কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিলো না বলে জানান তিনি।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক কাজী বলেন, সোমবার সকালে তুলশিরামপুর গ্রামের একটি ইউক্যালিপ্টাসের বাগানে দু’জনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। এরপর ঘটনাস্থল গিয়ে তাদের দ’জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় তাদের পাশে পড়া থাকা গ্যাসবড়ি , পানির বোতল, একটি মোবাইল ফোন, একজোড়া স্বর্ণের কানের দুল ও একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ দু’টি উদ্ধার করে ওইদিন দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
১৫/০৮/২০২৩
Leave a Reply