
মালিকুজ্জামান কাকা,যশোর প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ ফর্টিলাইজার এসোসিয়েশন খুলনা ও বরিশাল বিভাগ কর্তৃক সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বীত নিতিমালা-২০০৯ বহাল রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। প্রেসক্লাব যশোরে এই সংবাদ সম্মেলনে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেনা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফ্যার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব শাহ জালাল হোসেন। জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান টুকুনসহ প্রায় ৩০০ সার ডিলার ও এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ মতামত দেন। এদের মধ্যে ছিলেন, কেন্দ্রীয় নেতা ফায়জুর রহমান বকুল।
উদ্ভুত পরিস্থিতির বিষয় এই, ১৯৯৫ সাল থেকে ডিলারশীপ প্রথা চালু হওয়ার পর থেকে অত্যন্ত সুচারুরূপে প্রতিটি উপজেলায় এবং পরবর্তিতে জারিকৃত ডিলার নিয়োগ ও নিতিমালা-২০০৯ অনুযায়ী প্রতি উপজেলায় নিয়োগকৃত ডিলাররা তাদের প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে প্রাপ্ত বরাদ্দকৃত সার কৃষক পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরবরাহ করছে। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা বিসিআইসি নিয়োগকৃত ৫,৬০০ ডিলার এবং ২০০৭-২০০৮ অর্থবছর হতে বিএডিসি নিয়োগকৃত ৫,২০০ ডিলার। সব মিলিয়ে ১০,৮০০ জন ডিলার এবং ৪৫,০০০ খুচরা সার বিক্রেতাদের মাধ্যমে সার বিতরণে নিশ্চয় কোনভাবে সিন্ডিকেট করার কোন সুযোগ সেই।
১৯৯৫ সালে ডিলারশীপ প্রথা চালু হলে বিএনপি সরকারের সময় প্রায় ৪,৮০০ ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়। তারপর বিভিন্ন ইউনিয়নে ডিলার না থাকা সাপেক্ষে ২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সারা দেশে আরও ৮০০ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়। যা বর্তমানে সারাদেশে ৫,৬০০ জন অভিজ্ঞ বিসিআইসি ডিলার কৃষকদের নিকট সার সরবরাহের কাজ করছে।
বিগত ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিসিআইসি ডিলাররা পরিক্ষীত ডিলার হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯৯৫ সালে ২.০০ লক্ষ টাকা নিরাপত্তা জামানত স্বরুপ জমা দেয়া তৎকালীন সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য পরিমান বটে। নিরাপত্তা জামানতের পাশাপাশি গড়ে প্রতি মাসে ক্ষেত্রে বিশেষে ডিলারদের ৩০.০০ লক্ষ টাকা থেকে প্রায় ৬০.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সার উত্তোলনের জন্য বিনিয়োগ করতে হয়। ডিলারদের কাছ থেকে সার নিয়ে যায় খুচরা বিক্রেতারা এদের কাছে ডিলারদের ২০.০০ থেকে ৩০.০০ লক্ষ টাকা প্রায়ই বকেয়া থাকে যা ফসল তোলার পর খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় আবার খুচরা বিক্রেতাদেরও কৃষকের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠায় কৃষকদের নিকটও তাদের বাকীতে সার বিক্রয় করতে হয় যা তারা পরবর্তীতে ফসল তোলার পর পরিশোধ করে থাকে। এভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যবসার চেইনকে ধংস করে ফেলা হবে যদি “সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরন সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০২৫” ১লা জানুয়ারী ২০২৬ ইং থেকে জারী করা হয়। বহুলোক তাদের দায়-দেনা সমন্বয় করতে পারবে না। পাশাপাশি দেউলিয়া হয়ে মানুষের রুটি-রুজি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। একটি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া থেকে সরকারকে দুরে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি সরকারও নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।
সার ডিলার নিয়োগ সমন্বীত নীতিমালা-২০২৫ ইং ইউনিয়ন ভিত্তিক নতুন ডিলার নিয়োগ বাস্তবসম্মত নয় বলে বিএফএ মনে করে। কেননা ১ জন ডিলারকে ৩টি বিক্রয়কেন্দ্র ও গুদাম স্থাপন করতে হলে প্রচুর পরিমানে তার স্থাপনা খরচ এবং প্রতিমাসে পরিচালনা খরচ বৃদ্ধি পাবে। পক্ষান্তরে ৩ জন ডিলার নিয়োগ হলে প্রতিটি ইউনিয়নের প্রাপ্ত অংশ ৩টি ভাগে ভাগ হবে, কোন কোন ইউনিয়নে বছরে ২০০ মেঃ টন সার বরাদ্দ পাওয়া যায় তা যদি আবার ৩টি ভাগে ভাগ করা হয় এতে একদিকে ব্যবসা যেমন কমবে অন্যদিকে আর্থিক খরচ বাড়বে এবং ব্যবসা নিরুৎসাহিত হবে। অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, পরিবহন খরচ এবং নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারনে কোনভাবেই ডিলারশীপ ব্যবসাটি আর কার্যকর থাকবে না।
বিদ্যমান সার ডিলারদের ডিলারশীপ বহাল রাখতে হবে। একই পরিবারের যদি বাবা-ছেলে, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-ভাই যদি ২টি পৃথক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদ্যামান থাকে এবং সরকারের চাহিদা মাফিক প্রয়োজনীয় দলিল দস্তাবেজ উপস্থাপন/সরবরাহ করতে সক্ষম হয়, তবে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নিয়ম মোতাবেক ডিলারশীপ বহাল রাখা সমীচীন হবে। প্রতিটি নাগরিকের ব্যবসা করার অধিকার রয়েছে। নারীদের ব্যবসা-বানিজ্য উৎসাহিত করা সামাজিক দায়িত্ব বলে মনে করি।
হলে আবার পরিবর্তন হবে বিধায় সময় নিয়ে সমস্ত অংশীজনের মতামত অন্তবর্তী সরকারের অধীনে নীতিমালা সংক্রান্ত কোন পরিবর্তন আনলে আবার রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলেই তা কড়া সঠিক হবে। এমতাবস্থায় তাড়াহুড়া করে কিছু না করে সময় নিয়ে ভেবে-চিন্তে সমস্ত অংশীজনের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি, অন্যথায় মাঠ পর্যায়ে সার সরবরাহ অস্থিতিশীল এবং সংকট হলে এর দায় সরকারের উপরই বর্তাবে।
জেলার কষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের চাহিদা মোতাবেক সার কষি মন্ত্রনালয় থেকে অনুমোদন না করলে জেলার সারের সংকট দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক। কৃষি মন্ত্রনালয়কে দেখতে হবে জেলার চাহিদা মোতাবেক সার মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্ধ/সরবরাহ দিচ্ছে কিনা। জেলার প্রকৃত চাহিদা মাফিক সার মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্দ দিলে কোনভাবেই কোন জেলায় সারের সংকট হবে না।
ডিলারদের পরিবহন খরচ ও কমিশন বৃদ্ধি করতে হবে। ২০০৮ সালের পর থেকে জ্বালানী তেলের দাম কয়েক দফা বৃদ্ধি পাওয়ার পরও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি হয়নি তাছাড়া ব্যাংক সুদ, গুদাম ভাড়া, কর্মচারী ব্যয়, লোড-আনলোডসহ আনুসঙ্গিক যাবতীয় খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার পরও বিক্রয় কমিশন বৃদ্ধি হয়নি। পরিবহন খরচ ও বিক্রয় কমিশন বাস্তব সম্মত ভাবে বৃদ্ধি করতে হবে।
সরকার কর্তৃক ভর্তুকী মূল্যে কৃষক পর্যায়ে সার বিক্রয় করা হয় এ ধরনের সারের উপর কোন ভাবেই আগাম কর নির্ধারণ করা যাবে না। বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। অন্যথায় সারের বাজার অস্থীতিশীল হবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে সারের মূল্য বৃদ্ধি পাবে।
২০০৯ নীতিমালায় ১টি ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডে ৯ জন সাবডিলার ও একটি বিসিআইসির বিক্রয়কেন্দ্র বিদ্যমান মোট ১০টি বিক্রয় কেন্দ্র কৃষকদের সার সরবরাহ করছে। কিন্তু ২০২৫ নীতিমালায় ৩টি ডিলারের
৯টি কেন্দ্র প্রস্তাব করা হয়েছে। যাহা বর্তমান থেকেও কম।
বাংলাদেশ ফ্যার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের দাবি হচ্ছে,
১) ২০০৯ এর নীতিমালা বহাল রাখা।
২) বিসিআইসি সার ডিলারদের কমিশন বৃদ্ধি করা।
৩) জেলার চাহিদা মোতাবেক সার সরবরাহ প্রদান করা।
৪) বেসরকারি পর্যায়ে ৮০% এবং বিএডিসি’র মাধ্যমে ২০% নন-ইউরিয়া সারের আমদানীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
আমাদের আহবানে আপনারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন, এজন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং সকলকে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন (খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) এর পক্ষ থেকে
বিসিআইসি সার ডিলাররা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন বর্তমানে তারা লোকসান নিয়ে চিন্তিত।
আরও পড়ুনঃ নরসিংদীতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা সেবা দিলেন ১২ চিকিৎসক
Leave a Reply