
বিশেষ প্রতিবেদক
হাত বাড়ালেই মাদক দ্রব্য ইয়াবা। কে ভালো কে ইয়াবা সেবনকারী আর কে বিক্রেতা চেনার কোন উপায় নেই। এই নির্মম চরম বাস্তব চিত্রটি যশোর শহরের রেলগেট, রেলগেট পশ্চিমপাড়া ও রায়পাড়ার। আর এই নিষিদ্ধ মাদক ইয়াবা ব্যাবসা অর্থাৎ মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে জনৈক নারী লাইলী।
ঐ নারী ও তার মাদক সাম্রাজ্য থেকে অবৈধ আয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় সুধী জনেরা।
সূত্র জানায়, যশোরের এই মুহূর্তে সেরা মাদক হোল সেল ইয়াবা ডিলার লাইলি। তাকে মাদক সম্রাজ্ঞী বলছে লোকজন। প্রতি সপ্তাহে সে ও তার নেটওয়ার্কে লক্ষ লক্ষ পিচ ইয়াবা ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা দেশে। তার শত অনুসারী যারা যশোর জুড়ে বসবাস করে। আসে পাশে অন্তত সাত মহল্লায় তার ইয়াবা সাপ্লাই হচ্ছে। লাইলির বিশাল মাদক সাম্রাজ্য সম্পর্কে চমৎকার মাফিয়া ও মাদক নেট ওয়ার্কের সন্ধান মিলেছে।
জানা গেছে, মাদকের সীমাহীন রাজ্য এখন রেলগেট রায়পাড়া, রেলগেট পশ্চিম পাড়া। এই রেলগেট পশ্চিম পাড়ার মাদক রানী লাইলী। খোঁজ নিতে জানা যায়, লাইলির প্রথম স্বামী আব্দুল খালেক। তার মৃত্যুর পর অস্ত্র ব্যাবসায়ী চৌগাছা উপজেলার কুলিয়ার নজির কে বিয়ে করে। এরপর সে অস্ত্র ও মাদক ব্যাবসায় নাম লেখায়।
বর্তমানে সে, সে ছাড়াও তার ছেলে ১২ মামলার আসামী শুকুর, মেয়ে সুমী ও তাদের ভাড়া করা লোকেরা সারা দেশে নিয়ন্ত্রিত এক বিশাল মাদক সাম্রাজ্য গড়েছে। এই মাদক নেটওয়ার্ক থেকেই শঙ্করপুরের খানের ভাই এবা, ছোটোর বৌ, মরার বৌ আসমা, সেকেন্দারের বৌ ইয়াবা সাপ্লাই পায়। এছাড়া রকি, রকির মা জোৎস্না, হিজলে আবুলের বৌ মনু, চান গাজীর বৌ অনু, শিউলি, নূর ইসলামের ছেলে সোহেল, কানা বাসারের ছেলে তুহিন ও বৌ হামু লাইলির কাছ থেকে নিয়মিত ইয়াবা সাপ্লাই নেয়।
যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিম পাড়া, কলা বাগানপাড়া, চোরমারা দীঘির চারি পাশ, এমএম কলেজ পাড়া, টিবি ক্লিনিকপাড়া, ষষ্টিতলাপাড়া, মুজিব সড়ক, বুনোপাড়া এলাকা, পিটিআই রোড, শংকরপুর, চাঁচড়া, রায়পাড়া, রেলগেট, বেজপাড়া আনসার ক্যাম্প এলাকা, শহরের নিরাপট্টি, খুলনা বাস স্ট্যান্ড এলাকা, নীলগঞ্জসাহাপাড়া, সিটি কলেজপাড়া, বারান্দি মোল্লাপাড়া, শেখহাটি শশ্মান এলাকা, তমালতলা স্কুল মাঠ, শেখহাটি জামরুলতলা, উপশহর এবং খড়কি-খোলাডাঙ্গা ও ধর্মতলাসহ সর্বত্রে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলের রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে এই চক্রটি। কিশোর গ্যাং ছাড়াও নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরা পর্যন্ত মাদক সাপ্লাই চেইন এ রয়েছে। সচেতন মহলের দাবি-আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়াসী অভিযান পরিচালনা করে মাদক নির্মূল করতে হবে।
ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে মাফিয়া স্টাইলে মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে দাগি সন্ত্রাসীরা। নিষিদ্ধ ব্যবসায়ের উপর সামাজিক চাপ ঠেকাতে চালানো হচ্ছে মাফিয়া স্টাইল। দাপট নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে অস্ত্রধারী বাহিনী গড়ে তুলেছে মাদক কারবারীরা। মাদকাসক্ত ও উঠতি সন্ত্রাসীদের বাহিনীতে ভিড়িয়ে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালানো হচ্ছে।
মাদক সম্রাজ্ঞী লাইলি রেলগেট পশ্চিমপাড়ায় পোনে তিন শতক সরকারি মিলে আট শতক জমির উপর তার বাড়ি নির্মাণ করেছে। তবে এই বাড়িতে সাধারণত মাদক দ্রব্য থাকে না। ৭৭ নং চাঁচড়া মৌজায় সাবেক দাগ ৫৪০ ও ৫৪১ আর এস দাগ ২০৭৩ এ এই জমিটির অবস্থান।
লাইলি পুলেরহাট বেড় বাড়ি স্কাউট সেন্টারের পাশে ইসরায়েলের বাড়ির পিছনে সাত শতকের উপর একটি বহু তল ভবন নির্মাণ করছে। ঐ বাড়ি তার মেয়ে সুমী থাকে। তবে প্রশাসনিক ঝামেলা এড়াতে মেয়ে সুমী বেশিরভাগ সময় ভারতের বনগাঁয় থাকে। সেখানে তার ভাড়া করা বাড়ি রয়েছে। জানা গেছে ৪/৫ দিন আগে সে ৮৯ দিন পর আবার দেশে ফিরেছে। পুলেরহাট সূত্রে জানা যায়, ঐবাড়িতে এখন নিয়মিত রঙ্গলীলা চলে বলে ঐ এলাকায় জোর অভিযোগ রয়েছে। বেড়বাড়ি মৌজায় এস এ খতিয়ান ১১০, আর এস খতিয়ান ১০১, সেপারেশন খতিয়ান ৫৩৩, সাবেক দাগ ১২১, আর এস দাগ ১৭৫ জমির পরিমান সাত শতক। এই জমি ক্রয় দলিল নং ১৬০৫৮। তারিখ-১০/১১/২০২১।
প্রশাসনিক সূত্র জানায়, লাইলির মাদক এজেন্ট হিজলে আবুলের বৌ মনো চলতি অক্টবরে প্রশাসনিক সদস্যদের কাছে আটক হলে সে লাইলীর নাম বলে। প্রশাসনিক সদস্যরা পরে লাইলির বাড়ি অভিযান চালায়। সে পালিয়ে এ যাত্রায় রক্ষা পায়। তার ছেলে পুলিশ কে জানায় তারা ব্যাবসা করে না।
জানা গেছে লাইলির সাত বোনের তিনটি থাকে বোম্বে। আসে পাশের কয়েক বাড়ি সে ইয়াবা রাখে। এর মধ্যে নাইট গার্ড পুঁচকের বাড়ি মাল থাকে।
পুঁচকের বৌও তার মাদক জন। এছাড়া নতুন হাটের সাবেক মস্তান কিং কঙের স্ত্রী স্যাম, মুক্তারের ছেলে রফিকুলের কাছে মাল রাখে। এরা সম্পর্কে মা ও ছেলে। এজন্য তাদের প্রতিদিন নির্ধারিত টাকা ফি দিতে হয়।
আর রেলগেট মুজিব সড়কের দুটি দোকান থেকে সে লাখ লাখ টাকা মাদকের অর্ডার অনুযায়ী পাঠায়।
প্রথমে টাকা জড় করা হয় রনির মালিকানাধীন শিকদার ভ্যারাইটিজ স্টোর তথা দোকানে। এর পর তা পাঠানো হয় রনির দোকানের ঠিক বিপরীতে রাস্তার পূর্ব পাশের মিল্টনের বিকাশ নগদ দোকানে। সেখান থেকে টাকা ইয়াবার মূল মালিকের কাছে পাঠানো হয়। এই রনি রায়পাড়ার আওয়ামীলীগ নেতা নূর ইসলামের ছেলে বলে স্থানীয়রা দাবি করেছে। গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করলেই টাকা লেনদেনের বিষয়টি হাতে নাতে ধরা পড়বে।
গত কুরবানী ঈদে পোনে দুই লাখ টাকার গরু কিনেছিল। সাড়ে সাতমন মাংস হয়। এছাড়া সে ২০২৫ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়ার মৃত্যু বার্ষিকীতে ৪০ কেজি গরুর মাংস উপহার দেয় এলাকার এক বি এনপি নেতাকে। ঐ নেতার নাম স্থানীয়রা জানায় খায়রুল বাসার শাহীন ওরফে ডিস শাহীন। তিনি ডিস ইন্টারনেটের ব্যবসা করেন। মুজিব সড়কে এই শাহিনের অফিস। ঐ অফিসে মাদক সম্রাজ্ঞী লাইলিকে ও তার লোকজনকে নিয়মিত দেখা যায় বলে স্থানীয়রা জানায়। এর আগে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত লাইলি আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে জনৈক হাসান ইমাম বাবলু কে অর্থ দিত। ইনি ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা বলে জানা যায় এবং তিনি রেলগেট পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা।
সূত্র আরো জানায়, নিজের মাদক সাম্রাজ্য বিস্তার করতে সে তুহিন ও পিচ্চি রাজাকে দিয়ে রমজান কে খুন করায়।লাইলির পথের কাঁটা আরেক মাদক কারবারি ছিল এই রমজান ২০১২ সালে ফাঁড়ির টিএসআই রফিক লাইলি, ছেলে শুকুর, বেয়ান আমেনা, তৎকালীন জামাই সোহেল কে মাদক দ্রব্য সহ আটক করে। এছাড়া ৮৮ পিচ ইয়াবা সহ লাইলি ২০২৩ সালে আটক হয়েছিল।
লাইলি নিজের জন্মভূমি নড়াইল জেলার সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামেও অনেক জমি বা সম্পদ গড়েছে। তার ছেলে মাদক কারবারে জড়িত। তবে প্রশাসন কে ফাঁকি দিতে সে ইজিবাইক চালায়।
এসব মাদক ব্যাবসায়ী আঞ্চলিক রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মদদ রয়েছে। এদের কেউ সাংবাদিক কার্ডধারী। কেউ শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য। কেউ আবার অন্য পেশা অবলম্বনকারী।
স্থানীয় সমাজসেবীরা সকলেই প্রকাশ্য মাদক ব্যাবসার অবসানে দ্রুত প্রশাসনের কার্যকর একশন দাবি করেন
আরও পড়ুুনঃ
Leave a Reply