তানিম আহমেদ, নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের নৃশংস তাণ্ডবে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রাম ইতিহাসে “বিধবাপল্লী” নামে পরিচিত হয়। ওই বছরের ২৫ জুলাই টানা ছয় ঘণ্টার হত্যাযজ্ঞে এই গ্রামে ১৮৭ জন পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা। নির্যাতন ও সম্ভ্রমহানির শিকার হয়ে বিধবা হন ৬৪ জন নারী।
স্বাধীনতার পর সোহাগপুর গ্রাম ‘বিধবাপাড়া’ থেকে ‘বিধবাপল্লী’ এবং সর্বশেষ ‘বীরকন্যা পল্লী’ নামে স্বীকৃতি পায়। সরকারিভাবে ওই গ্রামের পরিবারগুলোকে ভাতা, ঘর নির্মাণ, রাস্তা পাকাকরণ, শহীদদের স্মরণে সৌরজায়া স্মৃতিসৌধ নির্মাণসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এমনকি গ্রামের ৩০ জন নারীকে দেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা (বীরাঙ্গনা) স্বীকৃতি।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই স্বীকৃতি ও সহায়তা অনেকটাই হারিয়ে গেছে। এখনো সোহাগপুরের নারীরা দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ খোঁজখবর নিচ্ছে না তাদের।
বিধবা জমিলা ও জবেদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন—
আগে ঈদের সময় সামগ্রী দিত, এখন তাও দেয় না। আমাদের খোঁজ নিতে কেউ আসে না। নানাভাবে হয়রানির শিকার হই। এই পরিস্থিতিতে সরকার যদি সহযোগিতা না করে তাহলে আমরা কী করব।
শেরপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বিধবাপল্লীতে খোঁজখবর নেওয়া হতো এবং ঈদ সামগ্রী প্রদান করা হতো। তবে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে এবার তা করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, ১৯৭১ সালের ভয়াল হত্যাযজ্ঞে বিধবার কান্নায় ইতিহাস কেঁপে উঠেছিল। অথচ আজও সেই বিধবাদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আবারও তাদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন : সানন্দবাড়ীতে পাগলা কুকুরের আতঙ্ক, আহত-২০
Leave a Reply