গাইবান্ধা থেকে মোঃ আবু জাফর মন্ডলঃ গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়ে আসছে নতুন ফাঁদ চায়না দুয়ারী জাল। এতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের বিলুপ্তির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খাল-বিলে এসব ফাঁদ পেতে ব্যাপক হারে ছোট দেশি মাছ শিকার করছে জেলেসহ অনেক মৎস্য শিকারিরা।স্থানীয়রা জানান, উপজেলার খাল-বিল ও জলাশয় গুলোতে চায়না দুয়ারী জাল ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায় উপজেলা জুড়ে শতশত জাল দিয়ে দিন-রাত মাছ শিকার চলছে। জেলেসহ সাধারণ মানুষও এই জালে মাছ শিকার করছে। আর এই ফাঁদে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই ফাঁদ বসানো হলে নদী ও জলাশয়ের পানি প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি হয়। জালের ছিদ্র ছোট হওয়ায় ছোট-বড় কোনো মাছেরই বের হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। লোহার রডের গোলাকার বা চতুর্ভুজ আকৃতির কাঠামোর চারপাশে চায়না জাল দিয়ে ঘিরে এই চায়না দুয়ারী নতুন ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন হাট- বাজারে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের পোনা বিক্রি হচ্ছে, যেগুলো চায়না দুয়ারী দিয়ে ধরা বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। উপজেলার গারানাটা গ্রামের মৎস্য শিকারি আশরাফুল ইসলাম বলেন, উভয় দিক থেকে ছুটে চলা যে কোনো মাছ সহজেই এতে আটকা পড়ে।
একবার যেকোনো ছোট-বড় মাছ ঢুকলে আর বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এদিকে গাইবান্ধা সদরেরবাদিয়াখালী এলাকার মাছ চাষি মোঃ গোলাপ মিয়া বলেন, এই চায়না দুয়ারী জালের কারণে আমরা আর দেশি মাছ পাই না।
এলাকাবাসী মনে করেন, চায়না দুয়ারী এসে আমাদের দেশীয় মাছের বংশ বিস্তার রোধ করে দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একদিন দেশীয় মাছ আমরা খুঁজেও পাব না। শুধু দেশি জাতীয় ছোট মাছ নয় বরং এই জালে আটকা পড়ে সকল প্রজাতির জলজ জীব। স্বল্প ব্যয়ে এবং স্বল্প পরিশ্রমে অধিক আয়ের উৎস হওয়ায় মাছ শিকারিদের কাছে খুব দ্রæত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই জাল।
অবৈধ চায়না দুয়ারী জালে রেণু পোনাও রেহাই পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে মাছ ধরা চলে আসলেও এ নিয়ে প্রশাসনের জোরালো কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ প্রসঙ্গে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল আহাদ লাজু সংবাদ মাধ্যম কে বলেন, আমাদের জনবল পর্যাপ্ত না থাকায় ব্যপক ভাবে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব না হলেও আমাদের অভিযান চলমান আছে পাশাপাশি খুব দ্রæত মাছের অভয়াশ্রম যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে এবং সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে বলে জানান।
শুধু নিষিদ্ধ জাল কিংবা চায়না দুয়ারী জালের কারনেই দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে নয়, এছাড়াও উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে মাছের অভয়াশ্রম যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। উপযুক্ত পরিচর্যা ও সংরক্ষণের অভাবে অনেক দেশীয় মাছের প্রজাতি হুমকির মুখে পড়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট দ্বায়িত্ব শীল কতৃপক্ষের দেশীয় মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি স্থানীয়দের।
Leave a Reply