
নিজস্ব প্রতিনিধি
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর কুর্মিটোলা বিমানবন্দর দিয়ে ভারতের উদ্দেশে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পালিয়ে যাওয়ার সেই মুহূর্তের একটি ভিডিও ভাইরাল হলে সারাদেশে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। তদন্তে উঠে আসে ভয়াবহ এক রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিপর্যয়—বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ভেতরে সক্রিয় ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (জঅড)-এর একটি ছায়া নেটওয়ার্ক!
কার হাতে ছিল ক্যামেরা? এয়ার ইন্টেলিজেন্স বিভাগের অনুসন্ধানে উঠে আসে, শেখ হাসিনার পলায়নের একমাত্র ভাইরাল ভিডিওটি ধারণ করেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রিফাত আশরাফী। ভিডিও ছড়িয়ে দেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহসিফ সুরি। দুজনকেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। রিফাতের অফিসের জানালা থেকেই সি-১৩০ জে বিমানে উঠার সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করা হয়।
তদন্ত করতে গিয়ে ধরা পড়ে ‘র’ নেটওয়ার্ক রিফাতের মোবাইল ফরেনসিক বিশ্লেষণের সময় তদন্তকারীরা সংযোগ খুঁজে পান স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফ-এর সঙ্গে। তার বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ: তিনি ছিলেন ‘র’-এর সক্রিয় এজেন্ট।
তার ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ভারতীয় প্যারা-কমান্ডোর ব্যবহৃত ঋঘ-৯০ ও ঝরম চ২২৯ রাইফেল, ১ কোটি টাকা ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস। তাকে ১৪ আগস্ট ডিজিএফআই গ্রেপ্তার করে এবং কোর্ট মার্শালে ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তিনি বর্তমানে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি সেলে বন্দি।
‘র’-এর ছায়া এজেন্ট ছিল বিমান বাহিনীর ভেতরেও! আলতাফের স্বীকারোক্তি ও তদন্তে আরও ৬ জন উচ্চপদস্থ বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাকে শনাক্ত করা হয়, যাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়:
এয়ার ভাইস মার্শাল এম এ আউয়াল হোসেন এয়ার ভাইস মার্শাল জাহিদুল সাঈদ এয়ার কমডোর মোহাম্মদ আমিনুল হক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ আল ফারুক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শামীম উইং কমান্ডার সাইয়েদ মোহাম্মদ পুলিশ বাহিনীতেও ‘র’ নেটওয়ার্কের ছায়া!
এয়ার ফোর্সের পাশাপাশি একই তদন্তে জড়িয়ে পড়ে পুলিশের চার কর্মকর্তা, যাদের ‘পারমানেন্ট সাসপেন্ড’ দেখানো হয়েছে:
ডিএমপি মিরপুরের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লাহ গুলশান ডিভিশনের অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার রফিকুল ইসলাম
ট্রাফিক যাত্রাবাড়ী জোনের অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার তানজিল আহমেদ এপিবিএনের অ্যাসিসট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
তাদের স্টেশন মাস্টার ছিলেন গুলশান ডিবির এসি ইফতেখার মাহমুদ, যিনি ছিলেন আলতাফের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও র-এর সহায়ক।
‘র’-এর পৃষ্ঠপোষকতা: বিলাসবহুল গাড়ি ও নারী প্রলোভন তদন্তে উঠে আসে, ‘র’ এজেন্ট হিসেবে কাজ করায় আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফকে উপহার দেওয়া হয় একটি নতুন হুন্দাই গাড়ি এবং তার কাছে নিয়মিতভাবে পাঠানো হতো সুন্দরী নারী—যারা তাকে তথ্য জোগাড় ও মানসিক প্রভাবিত করায় সহায়তা করতো।
উপসংহার: রাষ্ট্রযন্ত্রের শিকড়ে ‘র’-এর ছায়া! একটি ভাইরাল ভিডিও থেকেই যে বিশাল নেটওয়ার্কের পর্দা উঠে যাবে, তা কল্পনাও করেনি দেশের গোয়েন্দা মহল। শেখ হাসিনার পলায়নের মুহূর্ত ধারণ করতে গিয়ে ‘র’-এর ছায়া এজেন্টরা নিজেদেরকেই প্রকাশ করে ফেললো।
Leave a Reply