মো লিটন হোসেন ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার ২ নং মির্জাপুর ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কাবিটা প্রকল্পের আওতায় শুরু হয়েছে একটি রাস্তা নির্মাণকাজ। তবে কাজ শুরুর পর থেকেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ ও উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ হিসেবে তারা অভিযোগ করছেন, নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ভাঙাচোরা, নিম্নমানের ইট ও ধূলিযুক্ত বালি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণ সাইটে স্তূপ করে রাখা হয়েছে দুর্বল ও অপ্রশিক্ষিতভাবে প্রস্তুতকৃত ইট, যেগুলোর গায়ে “SNR”, “AG”, “NR” ইত্যাদি ছাপ থাকলেও অধিকাংশই ভাঙাচোরা ও সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত। পাশাপাশি ব্যবহৃত হচ্ছে ধূলিমাখা নিম্নমানের বালি, যা ভবিষ্যতে রাস্তার স্থায়িত্বে বড় প্রশ্নচিহ্ন সৃষ্টি করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদ বলেন, “ইট মন্ত্রী, বালি মন্ত্রী আইছে, এখনো পানি মন্ত্রী আসি নাই। পোড়ামাটি দিয়ে রাস্তা তৈরি হচ্ছে, এই ইট দিয়ে দাঁত মাজা যাবে! ময়লা নিম্নমানের ইট দিয়ে রাস্তা করছে, এই রাস্তা করার চেয়ে না করাই ভালো।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারি অর্থে যখন নির্মাণ হয়, তখন অন্তত ভালো মানের উপকরণ ব্যবহৃত হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে যে ইটগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো ঘর বানানোরও উপযোগী নয়। রাস্তা বা অন্য স্থাপনায় ব্যবহার হলে খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবেই এমন অনিয়ম হচ্ছে। উপকরণের মান যাচাই না করেই সরবরাহ ও কাজ শুরু হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, প্রকল্পস্থলে কোনো সাইনবোর্ড বা প্রকল্পের বিবরণ নেই। ফলে জনগণ জানতে পারছে না কাজের ধরন, বরাদ্দ অর্থ কিংবা ঠিকাদারের পরিচয়।
স্থানীয় ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রবিউল বলেন, “কত কিলোমিটারের কাজ হচ্ছে তা নিশ্চিত বলতে পারবো না, তবে হয়তো ২০০ মিটারের মতো। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে নিম্নমানের ইট ও বালুর কারণে কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।”
একই ইউনিয়নের সদস্য বাদশা মেম্বার মোবাইল ফোনে জানান, “যোগীপাড়া রইচের বাড়ি হইতে বছিরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় ম্যাকাডম করণ কাজ হচ্ছে, যার দৈর্ঘ্য ১৩০ মিটার। কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ৬ লক্ষ টাকার বাজেটে এই কাজ চলছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানা না থাকলেও কাজ করছেন লিটন নামের একজন। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ইট সরিয়ে প্রথম শ্রেণির ইট এনে কাজ পুনরায় শুরু করা হবে।”
এদিকে এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত প্রকল্প পর্যালোচনার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে নির্মাণ উপকরণের মান যাচাই করা হোক। একই সঙ্গে প্রকল্পের সকল তথ্য প্রকাশ করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও সময়ের দাবি।
স্থানীয় বাসিন্দা আলম বলেন, “জনগণের করের টাকায় পরিচালিত উন্নয়ন প্রকল্পে যদি নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার হয়, তবে তা একদিকে যেমন দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ে। প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপই কেবল এই অনিয়ম বন্ধ করতে পারে।”
শৈলকুপা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুলা হেলআল মাসুম সাথে মোবাইল ফোনে 01716665542 কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাই।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশী ৫৫ জেলেকে ফেরত দিল মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি
Leave a Reply