নিজস্ব প্রতিনিধি : সম্প্রতী জামালপুর শহর থেকে সবচেয়ে বড় ইয়াবার চালান উদ্ধার করেছে পুলিশ। আর তারপর থেকেই বেড়িয়ে আসছে এই চালানের মূল হোতাদের নাম। আটক দম্পত্তি ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়- এই চালানের সাথে সরাসরি জড়িত মুসলিমাবাদের জনি, মোস্তফা আর মাদক সম্রাট ফারুক।
চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর (শুক্রবার) সকালে শহরের দড়িপাড়া এলাকায় একটি আনন্দ ভ্রমনের বাসে তল্লাশি চালিয়ে ২২ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক দম্পত্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া ইয়াবার বাজার মূল্য ৬৬ লাখ টাকা বলে জানিয়েছিলো পুলিশ। সেই সময় বিসমিল্লাহ ট্রাভেলস নামে সেই বাসটি জব্দ করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- জামালপুর সদর উপজেলার ডিগ্রীরচর পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মতিন ও তার স্ত্রী শাহিদা বেগম। তবে তারা শহরের মুসলিমাবাদ এলাকার একটি ভাড়া বাসায় দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করতেন।
মঙ্গলবার এই দম্পত্তির পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষ হলে আবারো রিমান্ড আবেদন করে জামালপুর থানা পুলিশ।
তবে এই দুইজনকে গ্রেপ্তার ও ইয়াবার এতো বড় চালান উদ্ধারের পর থেকে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাড়ায় পুরো শহরজুড়ে। বেড়িয়ে আসতে শুরু করে অনেক তথ্য।
মঙ্গলবার দুপুরে রিমান্ড ও এমসি পরীক্ষা শেষে জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে পুলিশের গাড়িতে উঠার সময় গ্রেপ্তার শাহিদা বেগম স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে দেন একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
শাহিদা বেগম জানান- এই ইয়াবার সিন্ডিকেটের মূল হোতা জনি, মোস্তফা ও ফারুক।
এরপর কয়েকজন সাংবাদিক তার সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে- তারা শুধু এই চালানটি কক্সবাজার থেকে জামালপুর এনেছেন। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে মুসলিমাবাদ এলাকার জনি , মোস্তফা আর কুখ্যাত মাদক সম্রাট ফারুক।
জনি রানা জামালপুর শহরের মুসলিমাবাদ এলাকার মৃত বানছের আলীর পুত্র এবং মোস্তফা সেই এলাকার মৃত জবান আলীর সন্তান।
জনি রানা শহরের শহীদ হারুন সড়ক এলাকার ম্যাক্স ফুটওয়ার নামে একটি জুতার দোকানের মালিক এবং মোস্তফা জামালপুর জেলা যুবদলের সদস্য।
আর কুখ্যাত ফারুক একসময় মাদক ব্যবসার জন্য টাঙ্গাইলের কালিহাতী থেকে বিতারিত হোন। পরে জামালপুর শহরে অবস্থান নিলে একটি সময়ে সেখান থেকেও বিতাড়িত হোন তিনি। বর্তমানে ফারুক পার্বত্য চট্টগ্রাম অবস্থান করছে বলে জানা যায়। সেখানে তিনি ইয়াবার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠজন। আর তাকে জামালপুরের সবাই পিচ্চি ফারুক নামেই চিনেন।
২৪ অক্টোবর ইয়াবা উদ্ধারের পর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত এই বিষয় নিয়ে পাঁচটি বৈঠক করে মুসলিমাবাদের ৪ গ্রাম সমন্বয় কমিটি এবং বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেন তারা। ৩১ অক্টোবর রাতে একটি বৈঠকে গ্রেপ্তার শাহিদার মেয়ে জনি, মোস্তফা ও ফারুকের নামসহ পুরো বিষয়টি তুলে ধরেন বৈঠকের নেতৃবৃন্দ ও গ্রামবাসীর কাছে। এর একটি ভিডিও এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। আর পুরো বিষয় নিয়ে মুসলিমাবাদ, বাগেরহাটা বটতলা, বামুনপাড়া ও শেরপুর সদর উপজেলার কুলুরচর বেপারীপাড়া গ্রামের প্রতিটি বাসিন্দাদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। এই ঘটনায় যেকোনো সময় সংঘাতে জড়াতে পারেন গ্রামবাসী। এমনটাই আশঙ্কা করছেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়- জনি রানা পারিবারিক ভাবেই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। ২০ থেকে ২৫ বছর আগে জনি ঘুরে ঘুরে বাদাম বা চুড়ি-মালা বিক্রি করতেন। এর ফাকে ফাকে তারা ফেনসিডিল বিক্রি করা শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে বড় সিন্ডিকেটের মূল হোতা হয়ে যান তিনি। তিনি শুধু মাদকের বড় চালান এনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেন। তিনি সবসময় থাকেন লোকচক্ষুর আড়ালে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়- এক সময় হত দরিদ্র জনি এখন কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। জামালপুর শহরের মুসলিমাবাদ এলাকায় নিরালা মার্কেটে জমি-ভবন, শহীদ হারুন সড়কে দোকান, ম্যাক্স ফুট ওয়ার নামে বড় জুতার দোকান, কথাকলি মার্কেটের পেছনে একটি ভবন, বাগেরহাটা বটতলা এলাকায় জমি, মুসলিমাবাদ এলাকায় জমি রয়েছে জনি ও তার স্বজনদের নামে। সব মিলিয়ে ইয়াবার ব্যবসা থেকে আয় করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন জনি।
মোস্তফা’র বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়- জামালপুর থেকে কক্সবাজার যাবার পুরো পরিকল্পনাটি করেন মোস্তফা। জনি রানা না গেলেও মোস্তফা মুসলিমাবাদের কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে নিয়ে ভ্রমনের নামে ইয়াবার চালান আনতে যান। আর চট্টগ্রাম থেকে যোগ দেন ফারুক। যে বাসে তারা ভ্রমন করতে যান। সেই বাসটির মালিক মোস্তফার মেয়ের জামাই। আর সম্প্রতি হেরোইনসহ পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হোন মোস্তফার ছেলে রাজিব। তবে এখন তিনি জামিনে রয়েছেন বলে জানা যায়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়-‘জনি-মোস্তফা এসব ইয়াবার চালান ছোট ছোট করে ভাগ করে বিক্রি করেন খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে। মুসলিমাবাদের কমপক্ষে দশটি গ্রæপ এই ইয়াবা ক্রয় করে বিক্রি করে। মোস্তফা আর্থিকভাবে তেমন স্বচ্ছল নয়। তাই চালানের ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা করেন জনি। সেখান থেকে সামান্য কিছু লাভ নেন মোস্তফা।’
এসব বিষয়ে জনি রানা মোবাইল ফোনে বলেন-‘আমি এই শহরের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। দুই বছর আগেও একটি চক্র আমাকে এভাবে ফাসানোর চেষ্টা করেছে। আমার মান সম্মানক্ষুন্ন করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু তারা পারেনি। তাদেরকে সমাজ শাস্তি দিয়েছিলো। সেই শাস্তির জেড়ে এখন চক্রটি আবারো আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে। আমি নির্দোশ। আমি এসবের সাথে জড়িত না। আমার সব হালাল ইনকাম।’
মোবাইল ফোনে মোস্তফা বলেন-‘আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিােগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। যারা অভিযোগ করছে তারাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। আমি একসময় মুসলিমাবাদ এলাকার কমিটিতে ছিলাম। তখন মাদক ব্যবসায়ীদের শাসন করেছি। এখন তারাই আমার ক্ষতি করা চেষ্টা করছে। এসব পুরোটা সাজানো। তারা আমাকে ফাসিয়ে মূল হোতাদের বাচানোর চেষ্টা করছে।’
জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন-‘আমরা রিমান্ডে কিছু তথ্য পেয়েছি। এসব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আর তদন্তের স্বার্থে এসব তথ্য এখন গনমাধ্যমে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুনঃ ২০১৮সালে সংসদে যাওয়া বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নেতাকে বয়কটের ডাক
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.