
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ইস্যুতে গত কয়েকদিন ধরেই দেশের জাতীয় রাজনীতিতে চলছে নানা আলোচনা।দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ তাদের মিত্র দল গুলো জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণেভোটের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।অন্যদিকে,বাংলাদেশ জামায়াত ইসালামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি)সহ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের দাবিতে অনড়।
এমন পরিস্থিতিতে এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গণভোট ইস্যুতে “হ্যাঁ-না” ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে।ইতোমধ্যে “হ্যাঁ”ও“না”লেখা পোস্টে ভরে গেছে সোস্যালমিডিয়ার নিউজ ফিড।যারা জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট চান তারা “হ্যাঁ”লেখা পোস্ট শেয়ার করছেন,আর যারা জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট চান তারা “না” লেখা পোস্টার শেয়ার করছেন।
বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য,অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নে অবিলম্বে সরকারি আদেশ জারি করে একটি গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে।
গণভোটের ব্যালটে দেওয়ার জন্য কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে,“আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ(সংবিধান সংস্কার)বাস্তবায়ন আদেশ,২০২৫ এবং ইহার তফসিল-১ এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?”
“হ্যাঁ”কিংবা“না”এর মাধ্যমে জণগণ এ বিষয়ে তাদের সম্মতি জানাবেন।
এখন প্রশ্ন হলো,”তফসিল-১এ সংবিধান সংস্কারের জন্য কি কি প্রস্তাব সন্নিবেশিত আছে,তা যদি জনগণ নাই জানে তাহলে তারা সম্মতি জানাবেন কিভাবে?”
যারা শুরুতেই নানান শর্ত জুড়ে দিয়ে প্রথম দিকে “জুলাই জাতীয় সনদ”স্বাক্ষরে অস্বীকৃতি জানিয়ে তালবাহানা করে অবশেষে বিনাশর্তে স্বাক্ষরও করলেন তারাই এখন বিএনপিকে দোষারোপ করছেন,কেউ কেউ তো আবার বিএনপিকে আওয়ামীলীগের দোসরও বানিয়ে ছাড়ছেন গণভোট ইস্যুতে।যেই এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষরই করলো না তারাও এখন গণভোটের জন্য মায়াকান্না শুরু করছে।অথচ শুরু থেকেই বিএনপি জুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে সোচ্চার ছিলো এবং এখনও আছে।দু’য়ের মাঝে পার্থক্য কেবল চিন্তার ও দেশপ্রেমের।
গণভোটের মতো এমন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ কি এমনিতেই হয়ে যাবে,নাকি এ আয়োজনে বিশাল অংকের অর্থ ব্যয়েরও প্রয়োজন আছে?এক প্রতিবেদনে দেখলাম গণভোট আয়োজনে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় ও জাতীয় নির্বাচনের আগ মূহুর্তে এতো বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করে পৃথকভাবে একটি গণভোট আয়োজন করা কি খুবই জরুরি?একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে যেমন অতিরিক্ত প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই,বরং একইসাথে সাশ্রয় হবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।
এজন্যই বিএনপি প্রস্তাব করেছে জাতীয় নির্বাচনের সাথে একই দিনে গণভোট আয়োজনের।
বিতর্ক উঠেছে চুড়ান্ত স্বাক্ষরের পর সনদের কিছু কিছু ধারা বা উপধারা পরিবর্তনের।এই বিতর্কের নিরসন না করেই গণভোট আয়োজন কতটুকু যৌক্তিক হবে,প্রশ্ন এখানেও।
এমন পরিস্থিতিতে আমি মনে করি,জুলাই সনদের যে বিষয় গুলো নিয়ে বিতর্ক উত্থাপিত হয়েছে তা নিরসন করে এবং তফসিল-১এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবনা গুলো জনসাধারণ কে ভালোভাবে অবহিত করেই গণভোট আয়োজন করা যৌক্তিক ও বাস্তব সম্মত।
অন্যথায় বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ সনদ আর গণভোটে কতটুকু কার্যকর সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।
অধ্যক্ষ মাহবুবুর রশীদ মন্ডল, ০১.১১.২০২৫ খ্রিঃ।
Leave a Reply