নিজস্ব প্রতিবেদক মোহাঃ ফজলুর রহমানঃ১৩ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রস্তুতিপর্বেই চাপের মুখে ইসি ২নভেম্বর-২০২৫ খ্রিঃ রোববার
নানাবিদ চ্যালেঞ্জ থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরেশোরে এগিয়ে নেওয়ার দাবি করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে অবাধ,সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতির কথা বরাবরই বলছে তারা। তবে এই প্রস্তুতিপর্বেই নানা কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক উঠতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোও বিভিন্ন দাবি নিয়ে চাপ সৃষ্টি করছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে গত বুধবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ইসির কয়েকটি কার্যক্রমে ধীরগতি থাকায় এই সময়ের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তপশিল ঘোষণার কথা। গত ২৮ আগস্ট নির্বাচনী পথরেখা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করে ইসি। এতে আইন ও বিধির সংশোধন, অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ,সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ,ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা,রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চূড়ান্ত করা এবং নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা সহ ২৪টি কার্যক্রম প্রাধান্য পায়। রোডম্যাপে বর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কার্যক্রমের অগ্রগতি তেমন নেই। আরপিও সংশোধন নিয়ে নানা প্রশ্ন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী অধ্যাদেশ গত বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে রাষ্ট্রপতি সই করলে এই সংশোধনী কার্যকর হবে। তবে আরপিওর কয়েকটি সংশোধন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে জোটবদ্ধ হলেও সব দলকে নিজ প্রতীকে ভোট করার বিধান নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিএনপি ও তার মিত্ররা এরই মধ্যে এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। বিএনপি আগের বিধান বহাল রাখার দাবি জানিয়ে ইসি ও আইন উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল সংশোধিত বিধান বহাল রাখার পক্ষে। এ ছাড়া আরপিওতে অস্বাভাবিক হারে জামানত বৃদ্ধির বিষয়েও নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে অনেক দলের।
এদিকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ ধরে সংসদ নির্বাচনে দল ও প্রার্থীর আচরণবিধির গেজেট প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। নির্বাচনী প্রচারণায় পোস্টারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করাসহ কয়েকটি নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। তবে পোস্টার ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছে কয়েকটি দল।
প্রবাসীদের ভোটদান বিষয়ে প্রস্তুতি ধীর
প্রথমবারের মতো পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোটদানের সুযোগ দিতে ভোটার নিবন্ধন ও এনআইডি কার্যক্রম শুরু করেছে ইসি। আগামী নির্বাচনে অন্তত ৫০ লাখ প্রবাসী ভোটার পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিতে ভোট দেবেন-এমন পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। তবে এই প্রকল্পে ধীরগতির অভিযোগ রয়েছে। গত দুই বছরে ১০টি দেশের মাত্র ৫৫ হাজার প্রবাসীকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কাজ শেষ করেছে ইসি। নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন-৩০ হাজারের বেশি প্রবাসী। মাত্র ১৫ হাজার ৮৭৭ জন ভোটার হয়েছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেয়েছেন-১৩ হাজার ৯৯০ জন।
ভোট গ্রহণের আগে চার মাসে বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর ভোট দেওয়া নিশ্চিত করা যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যেই। প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের রেজিস্ট্রেশনের জন্য নির্বাচনী অ্যাপ চালু এখনও সম্ভব হয়নি। যদিও আগামী ১৬নভেম্বর এই অ্যাপের উদ্বোধন করা হবে বলে ইসি থেকে জানানো হয়েছে। ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন,প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। সে কারণে ইসি দ্রুতগতিতে কাজ শেষ করতে পদক্ষেপ নেবে।
সীমানা নির্ধারণে জটিলতা সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রমের শুরুতেই ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রশ্নের মুখে পড়ে ইসি। নানা প্রক্রিয়া শেষে গত ৪ সেপ্টেম্বর ১৬টি জেলার ৪৬টি আসনে রদবদল করে চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করে তারা। এতে গাজীপুর জেলায় পাঁচটি আসন থেকে একটি বাড়িয়ে ছয়টি এবং বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করা হয়।
তবে পুনর্নির্ধারিত সীমানা নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও সহিংসতার পাশাপাশি অন্তত ২০টি আসনের সীমানা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে ২৭টি রিট আবেদন হয়েছে। ফলে তপশিল ঘোষণার আগেই এ নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে ইসিকে। নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন,‘ইসি সবগুলো রিটের বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। আশা করছি,রিটের কারণে নির্বাচনে কোনো সমস্যা হবে না।’নতুন দল নিবন্ধনসহ আটকে আছে অনেক কিছু। নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন নিয়েও ইসির কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়েছে। সেই সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ‘শাপলা’ প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়েও সংকটে পড়েছে তারা। রোডম্যাপ অনুযায়ী, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন কার্যক্রমের শেষ দিন ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর। সেদিন ১৫টি দলের নাম প্রকাশ করে ইসি জানায়,জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি,এম এ জি ওসমানীর প্রতিষ্ঠিত জাতীয় জনতা পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ-শাজাহান সিরাজ) নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরও ১০টি দলের বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করা হবে। তবে অধিকতর তদন্তে ইসির পদক্ষেপে আপত্তি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে নিবন্ধনপ্রত্যাশী কয়েকটি দল। তারা দ্রুত নিবন্ধনের দাবিও তুলেছে। বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ-শাজাহান সিরাজ) নিবন্ধনের প্রাথমিক তালিকায় রাখার বিষয়টিও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ইসির তদন্ত কর্মকর্তারাই প্রতিবেদন দিয়েছেন,দল দুটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের‘অস্তিত্ব ও কার্যকারিতা’ নেই। নিষ্ক্রিয় দল দুটিকে নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় রাখায় বিস্মিত অনেকেই।
গত মার্চে শুরু করে সাড়ে সাত মাসেও নতুন দল নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি ইসি।
আরও পড়ুনঃ প্রসঙ্গ-জুলাই সনদ ও গণভোট বিতর্ক
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.