
এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ, অধ্যাপক আহসানুল্লাহ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক আহসানুল্লাহ বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকা পল্টনে লগি-বৈঠার তান্ডব ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। সেদিন প্রকাশ্যে নিরস্ত্র রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের ওপর যে নির্মম হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ। সেই দিন গণতন্ত্র, মানবতা ও ন্যায়বিচারকে রক্তে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার তান্ডব ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নগ্ন প্রকাশ। নিরস্ত্র মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল শুধু তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে। এটি ছিল মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
আজ (মঙ্গলবার) বিকাল ৪:৩০ মিনিটে দেওয়ানহাট মোড়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে সংঘটিত লগি-বৈঠার তান্ডবে হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজ ১৯ বছর পার হলেও সেই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। বরং যারা সে দিনের মূল পরিকল্পনাকারী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারা এখনো দেশে ও দেশের বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ ধরনের অন্যায়ের বিচার না হলে দেশে কখনো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সেদিন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের উপর পৈশাচিক হামলা চালিয়েছে ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। লগি, বৈঠা, লাঠি, পিস্তল ও বোমা হামলা চালিয়ে যেভাবে মানুষ খুন করা হয়েছে তা মনে হলে আজও শিউরে ওঠে সভ্য সমাজের মানুষ। সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ মেরে লাশের উপর নৃত্য উল্লাস করার মতো ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয় নাড়া দিয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমীর পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি ও চট্টগ্রাম ২ ফটিকছড়ি আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, নগর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরীর যৌথ পরিচালনায় উক্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, নগর জামায়াতে সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও চট্টগ্রাম ১০ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, নগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি এস এম লুৎফুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির উত্তরের সভাপতি তানজীর হোসেন জুয়েল, চট্টগ্রাম ১১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শফিউল আলম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, দেড়যুগ ধরে ফ্যাসিবাদী শাসনের মূলে ছিলো লগি-বৈঠা তাণ্ডব। সেই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা এখনো চলছে, ঐক্যবদ্ধভাবেই ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তারিখে। এটি ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়। প্রকাশ্য দিবালোকে লগি-বৈঠা দিয়ে তরতাজা তরুণদের পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে নারকীয় উল্লাস চালানো হয়েছিল সেদিন। দেশ ও জাতির স্বার্থেই এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন, দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, লগি-বৈঠা তাণ্ডব করেই ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচন ভণ্ডুল করে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করা হয়েছিল। ১/১১ অসাংবিধানিক সরকার, ২০০৮ সালের ডিজিটাল কারচুপির অস্বাভাবিক নির্বাচন, ২০১৪ সালের ভোটার বিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালের নিশিরাতে ফলাফল তৈরি এবং ২০২৪ সালের ডামি-আমি নির্বাচন করে দেড়যুগের ফ্যাসিবাদী শাসনের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করা এবং সমান্তরালভাবে ইসলামের সম্ভাবনাকে রুখে দিয়ে বাংলাদেশকে করতল রাজ্যে পরিণত করাই ছিলো সে জঘন্যতম পিশাচিকতার আসল উদ্দেশ্য। কিন্তু, অবশেষে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। হাজারো শহীদ, শত শত পঙ্গুত্ব-অন্ধত্বসহ নির্যাতনের সিড়ি বেয়ে ৩৬ জুলাই এক গণবিপ্লব সফল হয়েছ। ফ্যাসিস্ট পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু লগি-বৈঠার সেই ষড়যন্ত্র এখনো চলমান। বিপ্লবকে ব্যাহত করতে নামে-বেনামে ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসররা এখনো অগ্নিকাণ্ড, লুটপাট, খুন-রাহাজানিসহ নানা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। কাজেই ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি ও চৌদ্দ দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং খুনি-লূটেরাদের বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
উক্ত সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন নগর কর্মপরিষদ সদস্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল, হামেদ হাসান ইলাহী, আমির হোছাইন, অধ্যক্ষ মাওলানা জাকের হোসাইন, ফখরে জাহান সিরাজী, শ্রমিক নেতা মকবুল আহমদ, আবু তালেব, থানা আমীর ফরুকে আজম, এম এ গফুর, আহমদ খালেদুল আনোয়ার, মাহবুবুর হাসান রুমী প্রমুখ।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে সংঘটিত লগি-বৈঠার তান্ডবে হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে আজ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর দেওয়ানহাট মোড় থেকে বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে আগ্রাবাদ মোড়ে গিয়ে সমাবেশে মাধ্যমে শেষ হয়।
আরও পড়ুনঃ বউয়ের সাথে ঝগড়া, শৈলকুপায় স্বামীর আ/ত্ম/হ/নন
Leave a Reply