নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন-জুলাই সনদে স্বাক্ষর- সংশয়-কাটলো?
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করলেন বিএনপি- জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এই সনদকে ঐতিহাসিক অর্জন বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
যদিও জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং বাম ঘরানার চারটি রাজনৈতিক দল এই আয়োজনে অংশ না নেওয়ায় বিষয়টি নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন দলের নেতাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক সমঝোতার এই দলিলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতীয়ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও স্বাক্ষর করেছেন।
সনদ সাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন,তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে চান তারা।
তবে,দাবি আদায় না হলে"জনগণকে সাথে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি"পালনের কথাও জানান তিনি। যদিও এ বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টির অংশ না নেওয়া প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "আমার মনে হয় তারা কোথাও ভুল বুঝছে।"মি.আলমগীর বলেন,"দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
"এদিকে,জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করলেও এর আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন আছে জামায়াতে ইসলামীর। দলটির নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলছেন,প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থা রেখে জুলাই সনদে সই করেছেন তারা। সনদ বাস্তবায়নে কোনো ধরনের বিলম্ব জাতির সঙ্গে গাদ্দারি হবে বলে মন্তব্য করেন মি. তাহের। তিনি বলেন,"আমরা আশা করি উনিও উনার কথা ঠিক রাখবেন এবং বাংলাদেশে নতুন কোনো সংকট তৈরির ক্ষেত্রে ওনারা যেন কোনো ধরনের হেজিমনি তৈরি না করেন।"
এদিকে,জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরুর আগে শুক্রবার দুপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জুলাই যোদ্ধা পরিচয়ে বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায়। এসময় দুই-পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া,ইটপাটকেই নিক্ষেপ ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় আহত হন বেশ কয়েকজন। সনদে স্বাক্ষরের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অবশ্য বলেছেন,"এই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম।"
সনদ সাক্ষরে নানা আয়োজন বেলা তিনটার পর থেকেই অনুষ্ঠান স্থলে আসতে শুরু করেন অতিথিরা। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য,বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও দেশি- বিদেশী আমন্ত্রিতরা বসেন মূল মঞ্চের সামনে অতিথির আসনে।
বিকেল চারটায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরে সংসদ ভবন এলাকায় বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, লাঠিচার্জ, অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটে,সেই প্রেক্ষাপটে এবং বিরূপ আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠান শুরু হয় কিছুটা দেরিতে। বিকেল সোয়া চারটা দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠানস্থলের মূলমঞ্চে বসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেই বিকেল সাড়ে চারটার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা।
বিকেল পাঁচটা পাঁচ মিনিটের দিকে শুরু হয় জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর পর্ব। শুরুতেই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দুইজন করে প্রতিনিধি সনদে সই করেন। পরে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা।
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের পর বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন,"এই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম।"এ সময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেমন তেমন করে করলে আবারো দেশ আগের জায়গায় ফিরে যাবে। নির্বাচন উৎসবমুখর করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
বলেন,"পুলিশ এসে কেন ধাক্কাধাক্কি করবে,নিজেদের নির্বাচন নিজেরা করবো আমরা।" অনুষ্ঠানের আগে উত্তেজনা,সংঘর্ষ জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে শুক্রবার সকাল থেকেই জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। সকাল সাড়ে দশটার দিকে 'জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা'ব্যানারে কয়েকশ মানুষ সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এ সময় জুলাই সনদ সংশোধন, সনদকে স্থায়ীভাবে সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত এবং জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি- এই তিন দফা দাবিতে মূল মঞ্চের সামনেই অবস্থান নেন তারা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে পক্ষ থেকে জুলাই জাতীয় সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফায় পরিবর্তন আনার কথা জানানো হলেও সিদ্ধান্তে অনড় থাকে আন্দোলনকারীরা।
বেলা ১২টার পর অতিথিদের জন্য বরাদ্দ আসন ছেড়ে তাদেরকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করা হলেও সরেননি তারা। পরে তাদেরকে তুলে দিতে গেলে জুলাই যোদ্ধা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ-টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর ও অনুষ্ঠানস্থলের বাইরের শুভেচ্ছা তোরণ,তাবু ও ব্যানারে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।
পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে আহত হন বেশ কয়েকজন। বেলা আড়াইটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকেও অবস্থান নিতে দেখা যায়।
অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফায় পরিবর্তন বিক্ষোভের মুখে শুক্রবার দুপুরে জুলাই জাতীয় সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা সংশোধনের ঘোষণা দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
এ সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই যোদ্ধাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি জানান,জাতীয় সনদের পঞ্চম দফার অঙ্গীকারনামার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে জরুরী সংশোধন করা হয়েছে।
মি.রীয়াজ বলেন, এই অঙ্গীকারনামা বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারকে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপন করবে ঐকমত্য কমিশন। এবিষয়ে রাজনৈতিক দলও।
আরও পড়ুনঃ জামালপুরে ২৬ বছর পর বাবার বাড়িতে এসে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.