নিজস্ব প্রতিনিধি, তারিকুল ইসলাম তারা: কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিয়ামারী খেয়াঘাট সংলগ্ন উত্তর পাশের নদী থেকে ৪ বছরের শিশু ফেমার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি ঘটে বুধবার বিকেলের পর, আর উদ্ধার অভিযান শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত শিশু ফেমা চর লাঠিয়ালডাঙ্গা গ্রামের প্রবাসী ফিরোজ মিয়া ও জবা খাতুন দম্পতির একমাত্র কন্যা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী ফিরোজ মিয়ার স্ত্রী জবা খাতুনের সঙ্গে ফোনে স্বামীর কথাকাটাকাটি হয়। বিষয়টি পারিবারের অন্য সদস্যরা প্রথমে জানতে পারেননি। কথাকাটাকাটির পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ক্ষোভে-দুঃখে জবা তার চার বছরের কন্যা ফেমাকে বুকে জড়িয়ে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে জিঞ্জিরাম নদীতে ঝাঁপ দেন।
নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই জবা খাতুনের চিৎকার শুনে নদীর পাড়ে থাকা স্থানীয়রা দ্রুত ছুটে আসেন। পরে তারা নৌকা নিয়ে পানিতে নেমে জবাকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হন। তবে জবার বুকে থাকা ছোট্ট ফেমা নদীর স্রোতে তলিয়ে যায়।
খবর পেয়ে জবার শ্বশুর শহীদ মিয়া ঘটনাস্থলে এসে জানতে পারেন যে, তার পুত্রবধূ মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন এবং মেয়েটি নিখোঁজ রয়েছে। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে রাজিবপুর ফায়ার সার্ভিসে জানানো হয়।
রাতেই ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও অন্ধকারের কারণে উদ্ধার অভিযান স্থগিত রাখতে হয়। পরদিন সকালে জামালপুর থেকে বিশেষ ডুবুরি দল এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে অবশেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে বালিয়ামারী খেয়াঘাট সংলগ্ন নদী থেকে শিশু ফেমার লাশ উদ্ধার করা হয়।
লাশ উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিলেন রাজিবপুর ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার আজহারুল ইসলাম, টিম সদস্য রফিকুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরমান আলীসহ শত শত গ্রামবাসী।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। ছোট্ট ফেমার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামজুড়ে আহাজারি শুরু হয়।
স্থানীয়রা জানান, পারিবারিক কলহের জেরে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটবে তা কেউ কল্পনাও করেননি। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জবা খাতুনের মানসিক চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন।
নির্মল নদীর ঢেউয়ের মাঝে হারিয়ে যাওয়া চার বছরের নিষ্পাপ ফেমা এখন কেবল স্মৃতিতে বেঁচে থাকলো পরিবারের বুকে— রেখে গেল এক অবর্ণনীয় শোক আর প্রশ্নবিদ্ধ নীরবতা।
আরও খবর: হালুয়াঘাট সীমান্তে আটকভারত থেকে পুশইনকৃত ৬ রোহিঙ্গা
Leave a Reply