কাজ করলে,কথা বললে ভুল হবেই।প্রত্যেক ব্যক্তি,নেতা কিংবা সংগঠন সে যেই হোক,যে পর্যায়েরই হোক।বিশেষত বাংলাদেশের মতো বুর্জুয়া রাজনীতির ক্ষেত্রে এটি চিরন্তন সত্য।
আর এসব ভুলের সমালোচনা হবে সেটিও স্বাভাবিক,কিন্তু সমালোচনা যখন শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে তখনই ঘটে বিপত্তি আর বিপর্যয়।বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল তাদের গঠনতন্ত্রে লিপিবদ্ধ নীতি- আদর্শ ও উদ্দেশ্য শতভাগ লালন করে,মেনে চলে এমন দৃষ্টান্ত বিরল, সে যেরকম সংগঠনই হোক।সব দলেই যেমন দুষ্টু লোক আছে তেমনি ভালো লোকের সংখ্যাও কম নয়।
আমাদের দেশের সব দলেরই মূল লক্ষ্য ক্ষমতা কেন্দ্রীক রাজনীতি, যাতে ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্ট ও জনকল্যাণে নিজ দলীয় উদ্দেশ্য সমূহ বাস্তবায়ন করতে পারে।এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আদর্শ বিচ্যূত হয়ে যেমন উদার ডানপন্থী দলগুলো চরম বামপন্থীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে,তেমনি বিপরীত আদর্শের সঙ্গেও আপোষ করতে দ্বিধা করে না।
৮০'র দশক থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ রীতি প্রকটভাবে প্রতীয়মান এবং এখনো বিদ্যমান।এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামি শাসনের ধ্বজাধারী জামায়াত যেমন ৮৬'তে স্বৈরশাসক এরশাদ এবং ৯৬'র নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে বিশ্বাসী আওয়ামিলীগের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছে,
নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।একইভাবে স্বাধীনতার ঘোষকের হাতে তৈরি দল বিএনপিও স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার করেছে কেবল ক্ষমতা কেন্দ্রীক রাজনীতির জন্য।
জামায়াত ও আওয়ামিলীগ ৮৬ ও ৮৮'তে স্বৈরশাসক এরশাদের পাতানো নির্বাচনী ফাঁদে পা না দিলে,বিশেষত ৯৬ সালে জামায়াত যদি আওয়ামিলীগের সাথে জোটবদ্ধ আন্দোলন ও নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করতো তাহলে সেই সময়ই জাপা, জামায়াত ও আওয়ামিলীগের রাজনৈতিক ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হতে পারতো।
যেমনটি ৯০'র গণঅভ্যূঙ্থান পরবর্তী নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীন হয়েছিলো বিএনপি।দল গঠনের পর থেকেই ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন(চর মোনাই পীরের দল) জুলাই বিপ্লবের আগপর্যন্ত যেভাবে, যে ভাষায় জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে ইসলামের অপব্যাখ্যা করে(এই সময়ে কুরআন নাযিল হলে কুরআনে তাঁদের দাদা হুজুর ও বাবার নামে সূরা থাকতো) ধর্মভীরু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে, শেখ মুজিবের পরিবারকে ওলি- আউলিয়ার বংশধর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সভাসমাবেশে বক্তৃতা করেছে,শেখ হাসিনার কপালে নামাজের চিহ্ন দেখে অভিভূত হয়েছে,
গত ১৫/১৬ বছর নৌকার পালে হাতপাখার হাওয়া দিয়েছে,জুলাই বিপ্লবের পর সেই পীরসাহেবের দলই ক্ষমতার জন্য এতো দিনের চরম প্রতিপক্ষ জামায়াতের সঙ্গে একই সুরে গলা মিলিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে পরম মিত্র হয়েছে এবং শেখ পরিবারকে মুনাফেক ও শয়তানের বংশধর বানাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।বিএনপি পন্থীরা রাজপথে স্লোগান দেয়, "আমরা সবাই জিয়া সেনা,ভয় করিনা বুলেট বোমা।
"কিন্তু স্লোগানে গলা ফাটানো সেইসব সৈনিকেরা জিয়ার আদর্শ কতটুকু লালন করে, ধারণ করে সেটি যেমন প্রশ্নবিদ্ধ, আর সেকারণেই সম্প্রতি সারাদেশেই বিএনপি'র মধ্যম ও তৃতীয় শ্রেণির কিছু কিছু আদর্শবিচ্যূত নেতা- কর্মীদের দ্বারা চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে।ঠিক একইভাবে জামায়াতে ইসলামি ইসলামিশাসন কায়েমের কথা বললেও ক্ষমতার মোহে নারীর পোষাকের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি হিন্দুসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের দলে ভেড়ানোর পাশাপাশি অতিমাত্রায় ভারত প্রীতি দেখাচ্ছে।
যেখানে ইসলামে নারী- পুরুষ উভয়েরই পোষাকের একটা বিধান(পর্দাপ্রথা) চালু রয়েছে, সেখানে কোন ব্যক্তি বা ইসলামি সংগঠন চাইলেই কি সেরকম কিছু করতে পারে,তাছাড়া ইসলামি শাসন কায়েমের সাথে হিন্দুদেরই বা সম্পর্ক কি?তবে কি তারা কৌশলে হিন্দুসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মান্তরিত করার ফাঁদ পেতেছে?নাকি ইসলামি শাসন কায়েমের অন্তরালে তাদের নেতা আবুল আলা মওদুদীর ইসলামের ভ্রান্ত আকিদা প্রতিষ্ঠিত করতে চায়?
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায়ী আওয়ামিলীগ স্বাধীনতার পর থেকেই কখনো শেখ মুজিবের হাতে, কখনো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে তা বোধকরি গোটা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল।বিগত ১৫/১৬ বছর যেমন শেখ মুজিবের সমালোচনা করলেই তার দলের লোকজন ও পুলিশ বাহিনি সমালোচনাকারীর জীবন নাশসহ নানারকম নিপীড়ন-নির্যাতন করেছে,অনুরূপ ২৪'র জুলাই বিপ্লবের পর জামায়াতের কোন সমালোচনা করলেই তার কর্মীরা সমালোচনাকারীর ব্যক্তিগত চরিত্র হনন থেকে শুরু করে চৌদ্দপুরুষের ঠিকুজি উদ্ধার করে ছাড়ছে।
রাজনীতিতে ব্যক্তি এবং সংগঠনের সমালোচনা অনিবার্য,তবে সেটা হতে হবে শিষ্টাচার পূর্ণ,শিক্ষনীয় এবং ভদ্রোচিত ও মার্জিত ভাষায় যাতে সমালোচিত ব্যক্তি বা সংগঠন নিজেকে সংশোধনের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে,কিন্তু সমালোচনা যদি শিষ্টাচার বহির্ভূত হয় তাহলে সমালোচিত ব্যক্তি বা সংগঠন সংশোধনের পরিবর্তে হিংস্রতা প্রকাশের মাধ্যমে সমাজে নানারকম বিশৃঙ্খলা ও বিচ্যূতি ঘটায়।
ক্ষেত্র বিশেষে প্রাণনাশের মতো নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে।
অথচ এই রাজনৈতিক পাশবিকতা, হিংস্রতা,পারস্পারিক কাদা ছোঁড়াছুরির নোংরা রাজনীতি পরিহার করে একটি পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টি ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মানের অভিপ্রায়ে এদেশের ছাত্র-জনতাসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সম্মিলিত সংগ্রামে ২৪'র জুলাই-আগষ্টের অভ্যূঙ্থান সংগঠিত হয়েছিলো।
যদিও অভ্যূঙ্থান পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তি সরকারের অপরিপক্কতা, রাজনৈতিক দলগুলোর যথাযথ সহযোগিতা না করা ও অভ্যূঙ্থানে নেতৃত্বদানকারী একটি বড় অংশের নৈতিক স্খলনের কারণে বিপ্লবের চেতনা ফিকে হয়ে গেছে খুব দ্রুতই, তথাপি সময় ও সুযোগ ফুরিয়ে যায়নি।
অধ্যক্ষ মাহবুবুর রশীদ মন্ডল
চর রাজিবপুর বিএম কলেজ।
আরও পড়ুনঃ ঝালকাঠি ইসলামিয়া কিন্ডারগার্টেনে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.