বিশেষ প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের অন্যতম বণিককেন্দ্র চকবাজারের ফুলতলা মোড়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি ও সশস্ত্র হামলার ঘটনা এলাকাবাসীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। ঘাষিয়াপাড়া এলাকার কিশোর গ্যাং নেতা ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী জাবেদ (৪২), পিতা আলী আহম্মদ’র নেতৃত্বে গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টার দিকে সশস্ত্র দলগতভাবে একটি হোটেলে ঢুকে ব্যবসায়ী অমল মালাকারের ওপর নির্মমভাবে হামলা চালায়।
মামলার পরও অভিযুক্ত জাবেদ এখনো গ্রেফতার হয়নি — যা এলাকায় প্রশাসনের গাফিলতির প্রশ্ন তুলেছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ফুলতলা মোড়ে ক্ষুদ্র হোটেল ব্যবসা করে আসা অমল মালাকার কুশলভাবে তার ব্যবসা চালাচ্ছিলেন। হঠাৎ জাবেদ তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে হোটেলে প্রবেশ করে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তৎক্ষণাৎ ধারালো অস্ত্র দিয়ে অমল মালাকারকে লক্ষ্য করে আঘাত করা হয়; তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তার মাথায় একাধিক সেলাই দিয়ে জীবন রক্ষা করেন। হামলার সময় হোটেল থেকে সাত হাজার টাকার বেশি নগদ লুট করা হয় এবং উপস্থিত লোকজনকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
ঘটনাস্থলে জাবেদের সঙ্গে ছিলেন কিশোর গ্যাং সদস্য ফরিদ (১৮), নাজমুল (২০) ও আরও কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। এলাকাবাসী জানান, জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই জাবেদ পুনরায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে; প্রতিদিন ফুটপাতের দোকানি ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করে আসছে। কিছু সময় পুলিশের অভ্যন্তরীণ ঘনিষ্ঠতার কারণে তার দৌরাত্ম্য দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত থাকছে—এমন অভিযোগও উঠেছে স্থানীয়দের মধ্যে।
অভিযোগকারীরা বলছেন, “একাধিক মামলা থাকায়ও থানার পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় জাবেদ আজ এতটাই স্বাচ্ছন্দ্যে ক্রিয়াশীল যে সাধারণ মানুষ রাত-দিন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হত, তাহলে এমন রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটে না।”
এলাকাবাসী, ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগীর পরিবার একক কণ্ঠে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাদের ভাষায়—কিশোর গ্যাং এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করা না হলে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতির পথে যাবে। ভুক্তভোগী অমল মালাকার ও স্থানীয়দের জোরালো সহযোগিতায় চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে; তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ কোনো মন্তব্য করেনি এবং অভিযান শুরু করাও হয়নি।
চকবাজার, ফুলতলা মোড়, ঘাষিয়াপাড়া ও আমান আলী রোড এলাকাবাসীর একটাই প্রত্যাশা—“প্রশাসনিক ব্যর্থতার মূল্য আর নিরীহ ব্যবসায়ীদের রক্ত দিয়ে দিতে হবে না।” সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের মৌলিক দায়িত্ব; সেই দায়িত্ব তাৎক্ষণিকভাবে পালন করা না হলে নাগরিকদের অধিকার ও জীবনপ্রাণের নিরাপত্তা বিপন্ন হবে—এটাই এলাকাবাসীর আশঙ্কা ও আপিল।
Leave a Reply