নড়াইল প্রতিনিধি: মা গাছ খুব পছন্দ করতেন। সুযোগ পেলেই বাড়ির আঙ্গিনা বা পাশে নিজেদের যে কোন গাছ রোপন এবং পরিচর্যা করতেন। শৈশবে মা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও মায়ের বৃক্ষ প্রেম আমার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে।
মায়ের বিদেহী আতœার শান্তি কামনায় ৯১ সাল থেকে গাছ লাগিয়ে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত নড়াইল শহরের বিভিন্ন এলাকা এবং জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১২ হাজার ফলজ,বনজ ও ঔষধী গাছ লাগিয়েছি। এর মধ্যে বট-পাকড় ৬৫টি এবং তালগাছ লাগিয়েছি প্রায় ৩ হাজার। যতদিন বাঁচবো ততদিন এভাবে গাছ লাগিয়ে যাব।
কথাগুলি বললেন নড়াইল শহরের মহিষখোলা এলাকার সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক ব্যক্তিত্ব মোঃ মনির হোসেন। তিনি সবার কাছে যাযাবর মনির নামেই বেশি পরিচিত। এভাবে তাঁর মতো নড়াইল শহরের বাসিন্দা পরিবেশ কর্মী খন্দকার আল মুনসুর বিল্লাহ, মুন্সী কামরুজ্জমান বুলবুল,শাহ আলম, নজরুল ইসলাম, অ্যাডঃ অলিউল মাসুদ কোটন, অ্যাডঃ ইমরান, ইমন, আমিনুল হাসান মিঠু এই প্রচার বিমুখ ব্যক্তিরা একইভাবে নিজেদের অর্থায়নে নড়াইল শহরাঞ্চলে কয়েক হাজার গাছ রোপন করেছেন এবং করছেন।
তারা প্রতিদিন সকাল হলেই তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে বেরিয়ে পড়েন পথে প্রান্তরে। হাতে থাকে শাবল, কাচি,বাঁশের লাঠি ও দড়ি। কখনও বৃক্ষরোপন করছেন, কখনও এগুলোর আগাছা পরিষ্কার এবং পরিচর্যা করছেন। গবাদিপশু থেকে রক্ষার্থে খাঁচা দেয়া, পলিথিন দিয়ে গাছের গোড়া মোড়ানো, পানি দেয়া সবই করে থাকেন। বাঁশের খুঁটি পচে গেলে আবার দেয়ার ব্যবস্থা করা, কোন গাছ মরে গেলে নতুন গাছ রোপনের ব্যবস্থা করছেন। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো বিদেশী বা দ্রুত বর্ধনশীল গাছ রোপন করেন না।
বছরের প্রায় ১২ মাসই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নিরলনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা নিরবে নিজেদের অর্থ ও শ্রমে শহরের শোভাবর্ধন, পরিবেশের ভারসাম্য এবং পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবে এসব গাছ লাগিয়ে যাচ্ছেন। নড়াইল সরকারি বালক ও বালিকা বিদ্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, আদালত চত্ত্বর, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ, নড়াইল ফেরীঘাট, নড়াইল শহরের ৪ লেন সড়কের দু’পাশে চোখে পড়বে এসব গাছের সারি। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তারা এসব গাছ রোপন করে চলেছেন। বিভিন্ন গাছের মধ্যে রয়েছে বট-পাকড়, তাল, আম, জাম, কাঁঠাল, কদবেল,বেল, কাঠ বাদাম, চালতে, আমড়া, জামরুল, আমলকি,অর্জুন,হরিতকি, পলাশ, কদম, বকুল ইত্যাদি।
পরস্পর বন্ধু খন্দকার আল মুনসুর বিল্লাহ এবং মুন্সী কামরুজ্জমান বুলবুল বলেন, ক্লান্ত পথিক দেশী গাছের নীচে একটু আশ্রয় নিবে, গাছে গাছে পাখিরা বসবে, ফল খাবে, সাধারন মানুষও ফল পেড়ে খাবে, এ ধরণের স্বপ্ন নিয়ে সড়কের দু’পার্শ্বে প্রায় ২৫ পূর্ব থেকে গাছ লাগিয়ে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার গাছ লাগিয়েছি, বেঁচেছে প্রায় ৪’শ। তাদের রোপন করা প্রায় তিন’শ গাছে ফল ও ফুল ধরেছে। তারা জানান, গাছের পেছনে প্রায় সারা বছর দেখভাল করা,পরিচর্চা এবং সময় না দিলে গাছ বাঁচে না। এ বছর ২০টির মতো গাছ রোপনের কাজ শুরু করেছেন বলে জানান।
নিঃশ্বার্থ বৃক্ষপ্রেমি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি শাহ আলম জানান, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যে পরিরমান বনায়ন প্রয়োজন তা আমাদের নেই। এ এই বনায়নের অভাবে পাখিদের খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। ফলে দেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মানুষ,বন্যপ্রাণী ও পাখিদের বেঁচে থাকার জন্য গাছ লাগানো জরুরি। ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে আমার বিভিন্ন এলাকায় যখন গাছ লাগাতে যাই তখন এলাকাবাসীও আনন্দিত হয়। এতে তারাও গাছ রোপন করতে উৎসাহিত হয়।
নড়াইলের ফরেস্ট রেঞ্জার কাজী ইশতিয়াক রহমান বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তারা যদি আমাদের কাছ থেকে গাছের চারা নিতে চান তাহলে তাঁদেরকে গাছ দিয়ে আমরা সহায়তা করবো।
নড়াইল জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, নড়াইলে নিঃশ্বার্থভাবে যারা গাছ রোপন করছেন তাদের আগামিতে সুযোগ হলে বৃক্ষ মেলায় পুরস্কৃত করা যেতে পারে। কারন তারা নিঃশ্বার্থভাবেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্প্রীতি নিয়ে সংলাপ
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.