ইমান আলী, স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদ আজ দেশের তরুণ সমাজের কাছে এক সংগ্রামী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নাম।
নড়াইলের এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা এই শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষার কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পান। নিরলস প্রচেষ্টা ও মেধার স্বাক্ষর রেখেই তিনি উচ্চশিক্ষার দরজা খুলেছিলেন।
২০১৪ সালে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের জটিলতা দেখা দিলে হাইকোর্টের মামলার কারণে ভর্তি কার্যক্রম বিলম্বিত হলেও শেষ পর্যন্ত যোগ্যতার ভিত্তিতেই তিনি ঢাবিতে ভর্তি হন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক দাবিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন। শান্তিপূর্ণ মিছিল, মানববন্ধন ও আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
২০১৬ সালের ৮ আগস্টের আন্দোলনে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। সে সময় কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেও জালালের অবস্থান ছিল সর্বদা শান্তিপূর্ণ। ঢাবির মেধাবী এই ছাত্র ছিলেন সহপাঠীদের প্রিয় মুখ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণমূলক কার্যক্রমেও সক্রিয় অংশগ্রহণকারী।
২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনেও তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ছাত্রসমাজের ন্যায্য দাবিগুলো তিনি তুলে ধরেন। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও ভোটাধিকার নিয়ে তার অবস্থান ছিল সবসময় স্পষ্ট।
২০১৯ সালে তাকে ছাত্রলীগ করে ঢাবি মেডিকেল সেন্টারে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। সেদিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে তিনি ভেঙে পড়লেও সত্যের পক্ষে লড়াই থেকে বিরত হননি। তার ফুটেজ এখনো অনেকে স্মরণ করেন।
২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও তিনি গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট সমর্থক সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলে জালাল আন্দোলন করেছেন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
আজও তার জন্য ক্যাম্পাসে হাজারো শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গণতন্ত্রকামী মানুষ কণ্ঠ তুলছেন। তার মুক্তির দাবিতে চলমান আন্দোলন, মিছিল-সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন জালালের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয় এবং তার শিক্ষাজীবন নির্বিঘ্ন করা হয়।
সহপাঠীরা জানান, জালালকে ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কল্পনা করা যায় না। তিনি কেবল একজন ছাত্রনেতা নন, বরং নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা একজন বন্ধু, একজন সহমর্মী। তার সততা ও মেধার কারণে তিনি সবার কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।
Leave a Reply