ইমান আলী, স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা
ঢাকা, শনিবার ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ — ইতিহাসে ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব এক মহাবিপ্লবের নাম। এটি ছিল সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দমন-শোষণ আর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক অভূতপূর্ব গণজাগরণ। লাখো মানুষ রাস্তায় নেমেছিল বৈষম্যহীন একটি সমাজের স্বপ্নে, খুনি হাসিনাকে গদি থেকে টেনে হিচড়ে নামাতে। তাদের হাতে অস্ত্র ছিল না, ছিল শুধু বুক ভরা সাহস আর চোখ ভরা ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
কিন্তু সেই স্বপ্নকে থামিয়ে দিতে খুনি হাসিনা ঝাঁপিয়ে পড়ে নিষ্ঠুরতায়। টিয়ারগ্যাস, গুলি আর লাঠির সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ শুধু রক্ত দিয়েই প্রতিরোধ গড়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সেই এক মাসেই শহীদ হয়েছেন প্রায় ১৪০০ বীর। তারা মায়ের কোলে সন্তান রেখে গেছেন, স্ত্রীকে বিধবা করে গেছেন, অথচ রেখে গেছেন এক অমোঘ প্রতিজ্ঞা—বাংলাদেশ নতুন করে জন্ম নেবে।
জুলাই বিপ্লবের শহীদদের এক ফোঁটা রক্তও যাতে বৃথা না যায় সেই লক্ষ্যেই জন্ম নেয় জুলাই রেভ্যুলেশনারি এলায়েন্স (JRA)। তাদের যাত্রা শুরু সেই স্বপ্নকে বুকে নিয়ে—একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। JRA দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, প্রতিটি প্রাণহানির জবাব রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। তাই JRA কেবল একটি সংগঠন নয়, এটি এক প্রতিজ্ঞার নাম—ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞা, জুলাইয়ের শহীদদের স্মৃতি অমর রাখার প্রতিজ্ঞা এবং ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে আরেকটি ফ্যাসিবাদের কবল থেকে রক্ষার প্রতিজ্ঞা।
ষোল বছরের ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশকে বিষাক্ত করেছে, ভারতীয় আধিপত্যবাদ আমাদের সংস্কৃতিকে আচ্ছন্ন করেছে। কিন্তু JRA দৃঢ়প্রতিজ্ঞ—এই বিষাক্ত সংস্কৃতি উপড়ে ফেলে প্রতিষ্ঠা করবে বাংলাদেশের জনতার নিজস্ব সংস্কৃতি। বর্তমানে JRA দেশের অন্তত ৩০ জেলায় কাজ করছে, গণহত্যার বিচার চাইছে, শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখছে এবং আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণে স্বপ্ন দেখছে।
তাদের দীর্ঘ গবেষণায় উঠে এসেছে জুলাইয়ের বিভিন্ন কারবালা ও যুদ্ধক্ষেত্রের তথ্য। ২১ জুলাই ২০২৪ কারফিউ চলাকালীন বিজিবি গুলি চালালে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। মাধবদীর শেখেরচর ও মাজার বাসস্ট্যান্ড, মাওনা মহাসড়ক, রংপুর, উত্তরা ও ১৯ জুলাইয়ের অন্যান্য স্থানে বিজিবির গুলিতে বহু মানুষ প্রাণ হারায়। শুধু ৫ আগস্টেই মাওনায় ১০ জনের অধিক শহীদ হন। এসব হত্যাকাণ্ডের দায়েও এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। সেনাবাহিনী থেকে আসা কর্নেল রেদোয়ান ও মেজর রাফাতসহ একাধিক বিজিবি সদস্যকে সরাসরি গুলি করতে দেখা গেছে, তবু তারা বহাল তবিয়তে আছে।
JRA এবং Bangladesh Protest Archive যৌথভাবে বিজিবির গুলিতে হতাহতের তালিকা তৈরি করছে। এখনো প্রায় ৬০০+ শহীদের আবেদন পেন্ডিং রয়েছে। সরকার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দিতে ব্যর্থ হলেও JRA নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে ৯১৪ জন শহীদের নাম চিহ্নিত করেছে। গেজেটে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া বহু শহীদের পরিবার এখনো ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে। যেমন—উত্তরার শহীদ আব্দুর রউফ, গাজীপুরের হৃদয় প্রমুখ।
এই তালিকা তৈরিতে JRA-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা দিনরাত পরিশ্রম করেছেন—আনাস, সাজিদ, রাসেল, তৌহিদ, তানভীর, হামিম, তামিম এবং আহ্বায়ক সালেহ মাহমুদ রায়হান। তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
জুলাই বিপ্লব শুধু একটি আন্দোলন নয়—এটি ছিল একেকটি কারবালার সমষ্টি। ঢাকার যাত্রাবাড়ি, উত্তরা বিএনএস, মিরপুর ১০ কিংবা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত—প্রতিটি জায়গাই রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। তরুণরা গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েছে, শ্রমিকরা প্রাণ দিয়েছে রাস্তায়, শিক্ষার্থীরা রক্তে রাঙিয়েছে রাজপথ। খুনী হাসিনার নির্দেশে এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে।
JRA দাবি জানিয়েছে, জুলাইয়ের প্রতিটি গণহত্যাস্থলকে ‘July Massacre Square’ বা জুলাই গণহত্যা চত্বর হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এছাড়া শহীদদের নাম সম্বলিত ব্যানার ও তালিকা দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভুলে না যায় যে এই রাস্তাগুলো একদিন রক্তে ভিজেছিল
আরও পড়ুনঃ হাটহাজারী মাদরাসা নিয়ে ব্যঙ্গাক্তকারী আরিয়ান ইব্রাহিম কে গ্রেফতার করেছে ফটিকছড়ি থানা পুলিশ।
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.