মালিকুজ্জামান কাকা
অবশেষে জেগে উঠেছে মুক্তেশ্বরী প্রভাবিত এলাকার মানুষ। যশোরের ঐতিহ্যবাহী মুক্তেশ্বরী নদী ভরাট করে প্লট বিক্রি হচ্ছে। আর তা রুখে দিতে একাট্টা হয়েছে এলাকাবাসী। গঠন করা হয়েছে প্রতিরোধ জোট।
মুক্তেশ্বরী দখল অবমুক্তসহ ১১ দফা দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন বিল হরিণার সর্বস্তরের মানুষ। বিল হরিণার ভাতুড়িয়ায় মুক্তেশ্বরী পাড়ে কৃষক সমাবেশ থেকে এই একাত্মতার ঘোষণা দেন। বিল হরিণা বাঁচাও আন্দোলন ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এই কৃষক সমাবেশের আয়োজন করে। চলতি সপ্তাহে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়ায় মুক্তেশ্বরী নদীর একাংশ ভরাট করে তৈরি করা প্লটের পাশেই এই সমাবেশ আয়োজন ও সম্পন্ন হয়। কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’র (বাপা) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. মোসলেম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাপা’র কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রসুল।
প্রধান আলোচক ছিলেন বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক খন্দকার আজিজুল হক মনি। বিশেষ আলোচক ছিলেন বাপা যশোর অঞ্চলের সদস্য সচিব অধ্যাপক আবু সাঈদ মো. আতিকুর রহমান। বক্তব্য দেন- বিল হরিণা বাঁচাও আন্দোলনের ভাতুড়িয়া আঞ্চলিক কমিটির সদস্য সচিব মাসুদুজ জামান টিটো, অধ্যক্ষ পাভেল চৌধুরী, অধ্যাপক গোপিকান্ত সরকার, অধ্যাপিকা ফিরোজা বুলবুর কলি, ড. আহসান হাবিব, মসিয়ার রহমান, রেজাউল করিম, ইউপি সদস্য শফিযার রহমান, মোজাহার হোসেন নল্লা প্রমুখ।
বিল হরিণা বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক শেখ রাকিবুল ইসলাম নয়ন সঞ্চালনা করেন। সমাবেশে নেতারা মুক্তেশ্বরী নদী দখলমুক্ত ও বিল হরিণার জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে একাট্টা হওয়ার ঘোষণা দেন। এসময় মুক্তেশ্বরী নদী দখলমুক্ত ও বিল হরিণার জলাবদ্ধতা নিরসনে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।
দাবি গুলো হচ্ছে : বিল হরিণার পানি নিষ্কাশনের পথ ভাতুড়িয়া পূর্বপাড়া মুক্তেশ্বরী নদীর ব্রিজের উত্তরে মাটি ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রির অপচেষ্টা বন্ধ করে দখল উচ্ছেদ করতে হবে। সম্পূর্ণ মুক্তেশ্বরী নদী দখলমুক্ত ও সিএস রেকর্ড অনুযায়ী নদীর সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে স্থায়ীভাবে পিলার স্থাপন করতে হবে। অবৈধ দখল মুক্ত করতে হবে এবং হরিণা বিলের ধানসহ অন্যান্য ফসল কৃষকের বাড়িতে পরিবহনের জন্য মুক্তেশ্বরী নদী ও খালের উভয় পাশে রাস্তা নির্মাণ করতে হবে।
মুক্তেশ্বরী নদীর ম্যাপ অনুযায়ী রেকর্ড করে সেই অনুযায়ী খনন ও জিয়া খালের সংযোগ রেকর্ডভুক্ত করতে হবে। জিয়া খাল (চাঁচড়া দক্ষিণ পাড়া থেকে শুরু করে ঢাকুরিয়া পর্যন্ত) পুনঃখনন করে এটাকে সরকারি খালের আওতায় এনে রেকর্ডভুক্ত করতে হবে। বিল হরিণার তিনটি শাখা খাল ত্রিকিন নালা, সিক্বের নালা ও হরের নালা পুনঃখনন ও দখলমুক্ত করতে হবে। বিল এলাকার ব্রিজসমূহ উঁচু ও প্রশস্ত করে পুনর্নির্মাণ ও ব্রিজের দুই পাশের খালসমূহ উদ্ধার করতে হবে। জিয়া খালের ওপর ব্রিজ পুনর্নির্মাণ করতে হবে। মুক্তেশ্বরী নদী দখল ও বিল হরিণার জলাবদ্ধতায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
দীর্ঘ জলাবদ্ধতার কারণে পরিবেশগত যে, বিপর্যয় হয়েছে তা নিরূপণের লক্ষ্যে দ্রুত পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মুক্তেশ্বরী নদী, জিয়া খালসহ অন্যান্য খালে সব পাটা দ্রুত অপসারণ করতে হবে। নেতারা বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে মুক্তেশ্বরী নদীর আওতাভুক্ত বিল হরিণার প্রায় ৩ হাজার ৭০০ বিঘা জমিতে কোনো আবাদ হয় না। এখানে ফসলের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে (কৃষক, ভূমিহীন ক্ষেত মজুর, প্রকৃত মৎসচাষি ও মৎস্যজীবী) দশ কোটি টাকা।
সমাবেশ ও বিল পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’র (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাসহ স্থানীয় নেতারা যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় তারা জেলা প্রশাসককে বিল হরিণার জলাবদ্ধতা ও মুক্তেশ্বরী দখল সম্পর্কে অবহিত করেন। জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বাপা নেতাদেরকে জানান, মুক্তেশ্বরী দখল করে প্লট তৈরির বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরপর দখল উচ্ছেদে অভিযান পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)'র সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির জানান, তারা মুক্তেশ্বরী দখল করে প্লট তৈরি ক্ষেত্র ও বিল হরিণার জলাবদ্ধতা পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ রাসায়নিক সার বিতরন
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.