দশানী-টুয়েন্টি ফোরঃ
তিয়েনআনমেন স্কয়ারে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল কামানের গোলার শব্দ,আর বেইজিংয়ের সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল সেনাদের প্রথম দলটি। কিন্তু এসবের আগেই সামনে এলো দিনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটি।
দীর্ঘ সময় ধরে হাত মিলিয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আনকে স্বাগত জানান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, এরপর অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে যান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিকে। একটু পর বিশ্বের সবচেয়ে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত এই দুই নেতাকে পাশে নিয়ে নিজের আসনে বসেন শি জিনপিং।
এটিকে বলা যায় নিছক রাজনৈতিক নাটক। চীনের সামরিক সক্ষমতার প্রদর্শনীর চেয়ে এই বৈঠকটিই বরং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিরক্তই বেশি করেছে বলে মনে হচ্ছে। চীনে কুচকাওয়াজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে কঠোর ভাষায় একটি বার্তা পাঠান ট্রাম্প,যেখানে তিনি এই তিন নেতার বিরুদ্ধে আমেরিকা-বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন।
পুরো প্যারেড জুড়ে পুতিনকে ডানে এবং কিমকে বামে রেখে প্রেসিডেন্ট শি সম্ভবত এমন প্রতিক্রিয়াই আশা করেছিলেন। এমনকি এই মুহূর্তটি এমন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ক্ষুব্ধ করার জন্যও তৈরি করা হতে পারে, যিনি সম্ভবত বৈশ্বিক মনোযোগের কেন্দ্রে থাকতেই পছন্দ করেন। তবে সব মনযোগ মূলত নিজের দিকেই টেনে নিয়েছেন চীনা নেতা,যা ব্যবহার করে পূর্বাঞ্চলের-নেতৃত্বাধীন একটি জোটের ওপর নিজের ক্ষমতা এবং প্রভাব জাহির করতে পেরেছেন।
এটি এমন একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী যা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ট্রাম্পের নেতৃত্বের নানা কারণে বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত, তখন শি'র কাছ থেকে এটি একটি জোরালো বার্তা। কিম এবং পুতিন ছাড়াও আরও ২০ জনেরও বেশি বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এই সপ্তাহের শুরুতে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে শি'র সাক্ষাৎ নিজেদের মধ্যে সমস্যাগ্রস্ত সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছে।
ভারতীয় পণ্য আমদানির ওপর ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে দীর্ঘদিনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন-ভারতের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে বলেও মনে হচ্ছে।
বুধবার চীনের এই আয়োজনে মূলত জাপানের বিরুদ্ধে ৮০ বছরের পুরনো বিজয় উদযাপনের কথা ছিল। কিন্তু এটি আসলে সামনে তুলে ধরেছে-ভবিষ্যতে চীন কোথায় যাচ্ছে সেদিকে এবং একজন বিশ্বনেতা হিসেরে শি-এর ভূমিকা পালনের বিষয়টিকে। আর পশ্চিমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো একটি সামরিক বাহিনীও যে চীন গড়ে তুলেছে সেটাও ছিল শি জিনপিংয়ের সামনেই। চীনের হাতেই এখ ক্ষমতার লাগাম এই প্রথম একসাথে দেখা গেল শি, পুতিন ও কিমকে।
আর তারা একসাথে, ঐতিহাসিক'গেট অব হ্যাভেনলি পিস' স্কয়ারে উঠলেন সামরিক কুচকাওয়াজ দেখার জন্য। এর প্রতীকী রূপটিও নজর এড়ায়নি।
কমিউনিস্ট চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও জেদং ১৯৪৯ সালে দেশটিতে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১০ বছর পর সেখানেই তিনি কিমের দাদা কিম ইল-সাং এবং তৎকালীন সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভকে একটি সামরিক কুচকাওয়াজ দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
সেবারই শেষবারের মতো এই তিন দেশের নেতারা একসাথে ছিলেন।
তখন কোল্ড ওয়ার পরিস্থিতি ছিল তুঙ্গে। বিশ্বের বেশিরভাগ অংশ থেকেই বিচ্ছিন্ন ছিল চীন,যেমনটি ছিল উত্তর কোরিয়াও। আর সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল তাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ধনী। তবে এখন এই সম্পর্কের নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে। পারমাণবিক অস্ত্রধারী,কিন্তু দরিদ্র দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার বেইজিংয়ের সাহায্য প্রয়োজন। আর পুতিনের প্রয়োজন সেই বৈধতা যা শি তাকে দিয়েছেন।
অতীতে পুতিন এবং কিমের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন শি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে প্রকাশ্যে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছিলেন বলেই মনে হয়েছিল। অবশ্য এই ঘটনার নিন্দাও করেননি তিনি। এমনকি রাশিয়াকে সাহায্য করার কথাও অস্বীকার করেছিল চীন। এমনকি রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার সাথে সাথে মনে হচ্ছিল যে তিনি হয়তো পাশে ছিলেন। অর্থ এবং প্রযুক্তির বিনিময়ে পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণকে সমর্থন করার জন্য সৈন্যও পাঠিয়েছেন কিম।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে শি তার দুই প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়িয়ে আছেন, যদিও তারা কিয়েভ আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। "আজ মানবতা আবারও শান্তি অথবা যুদ্ধ, সংলাপ অথবা সংঘর্ষ,জয় অথবা শূন্যের মধ্যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার মুখোমুখি" কুচকাওয়াজ দেখতে আসা দর্শক এবং দেশজুড়ে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে থাকা মানুষের উদ্দেশে বলেন মি.শি।
তিনি ঘোষণা করেন যে চীন একটি"মহান জাতি যারা কখনো কোনও উৎপীড়নের দ্বারা ভীত হয় না।" আর সামরিক কুচকাওয়াজটি ছিল এটিই দেখানোর জন্য যে- এটি ছিল শক্তি, নির্ভুলতা এবং দেশপ্রেমের প্রদর্শন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বিরুদ্ধে চীনের বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৮০ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল। যে শব্দ ছড়িয়ে পড়েছিল,৫০ হাজার দর্শক, যাদের মধ্যে কয়েকজন যুদ্ধের প্রবীণ,নীরব হয়ে থাকা ওই স্কোয়ারের প্রতিটি কোণে। নিজেদের ওপর ঘুরতে থাকা ক্যামেরাগুলো অনুসরণ করে আলাদাভাবে সামনে আসেন গায়ক দলের সদস্যরা। যারা নিখুঁত সুরে গেয়ে ওঠেন,"কমিউনিস্ট পার্টি ছাড়া, আধুনিক চীনের অস্তিত্ব নেই।"
প্রেসিডেন্ট শি তার সৈন্যদের পরিদর্শন করার জন্য প্যারেড রুটের পুরোটা গাড়ি চালিয়ে যান, এরপর তার পাশ দিয়ে পা বাড়িয়ে পালাক্রমে এগিয়ে যায় প্রতিটি যুদ্ধ ইউনিট। চীনের নতুন অস্ত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে প্রথমেই ছিল ট্যাংকগুলো। তবে তার পরের অস্ত্রগুলোর তুলনায় এগুলো পুরনো মনে হচ্ছিল। সমুদ্র,স্থল এবং আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য একটি নতুন পারমাণবিক-সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র,ড্রোন আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য হাইপারসনিক জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং লেজার অস্ত্র। এছাড়া ছিল লক্ষ্যবস্তুতে নজরদারি করতে পারে এবং আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ড্রোনও।
আরও পড়ুনঃ নড়াইলে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম রুহুল আমিনের দুর্নীতি ও গ্রাহক ভোগান্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.