সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চন্দ্র সরকারঃ দেশে সাংবাদিক নির্যাতন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। হামলা, হত্যা, মিথ্যা মামলা ও হয়রানি এখন যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাংবাদিকদের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী মহল মিলিতভাবে নানা কৌশলে সাংবাদিকদের হয়রানি করছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানায়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশে ৪৯৬ জন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। পাশাপাশি, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তথ্যে উঠে এসেছে—চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ২৭৪টি হামলার ঘটনায় ১২৬ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন এবং অন্তত ৯ জন খুন হয়েছেন।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা চরমভাবে হুমকির মুখে পড়েছে, যা মুক্ত গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক ভয়াবহ ঘটনা
গত বছরের ১০ অক্টোবর দীপ্ত টিভির সম্প্রচার কর্মকর্তা তানজিল জাহান তামিমকে বাসায় ঢুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১২ অক্টোবর ময়মনসিংহে প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি স্বপন কুমার ভদ্রকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ বছরের ২৭ আগস্ট হাতিরঝিল থেকে উদ্ধার করা হয় সাংবাদিক রাহনুমা সারাহর লাশ। সর্বশেষ, গাজীপুরে লাইভে এসে চাঁদাবাজদের নাম প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রকাশ্যে গলা কেটে হত্যা করা হয় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে—যা গোটা সমাজকে স্তম্ভিত করেছে।
হুমকি ও হয়রানির ধরণ
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, পৌর মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান, ইটভাটা মালিক, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী পর্যন্ত সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মসূচির ছবি ব্যবহার করে ‘রাজনৈতিক পরিচয়’ তৈরি করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।
নিরাপত্তাহীনতার বিস্তার
শুধু সাংবাদিক নয়, সাধারণ মানুষও ক্রমেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ী খুন, দুর্নীতি তুলে ধরায় গৃহবধূ হত্যা, ছিনতাইয়ে পথচারী নিহত—এসব ঘটনা বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অনেকে পুলিশে যেতে বা মামলা করতে ভয় পাচ্ছেন।
সমাধান ও সুপারিশ
ঢাকা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আওরঙ্গজেব কামাল বলেন, “সাংবাদিকদের সুরক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিক হত্যা মামলার ছয় মাসের মধ্যে রায় ঘোষণা, ডিএসএসহ অন্যান্য আইনের অপব্যবহার বন্ধ এবং দলমত নির্বিশেষে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
তার মতে, সরকারকে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখিয়ে প্রমাণ করতে হবে—অপরাধী যেই হোক, বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। নইলে অপরাধীরা আরও সংগঠিত হবে এবং সাধারণ মানুষও নীরব হয়ে পড়বে, যা একটি জাতির জন্য ভয়াবহ সংকেত।
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.