সাইফুল ইসলাম রুদ্র, নরসিংদী জেলা প্রতিনিধিঃ নরসিংদী সিটি হাসপাতালে মোসা: লিমা আক্তার (২৮) নামে এক প্রসূতির সিজারের সময় পেটের ভেতর ১৮ ইঞ্চির টুকরো মব কাপড় রেখেই সেলাই করে দিয়েছেন এক চিকিৎসক।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই নরসিংদীর সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন সিভিল সার্জন।
প্রসূতি লিমা আক্তার নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের দত্তেরগাঁও মির্জাকান্দি এলাকার রহিম মিয়ার স্ত্রী। সংকটাপন্ন অবস্থায় লিমা আক্তার বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগী প্রসূতির পরিবারের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রসব ব্যথা ওঠার পর গত ১৭ জুন লিমা আক্তারকে নরসিংদী পৌর এলাকার বাসাইল এলাকায় অবস্থিত নরসিংদী সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেলে তাকে সিজারিয়ান অপারেশন করেন হাসপাতালটির চিকিৎসক শিউলি আক্তার। এসময় লিমা এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন।
এরপর ২১ জুন দুপুরে লিমা আক্তারকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বাড়ি ফেরার পর তিনি পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। এ ঘটনার পর সিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভুক্তভোগী নারীর ভাই জহিরল ইসলাম।
এ অবস্থায় ২৫ জুন ভুক্তভোগী নারীকে ফের একই হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। সেখানে কিছুই ধরা পড়েনি, পরে তাকে নরসিংদীর অপর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক লিমা আক্তারকে দ্রত ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন এবং তার পেটে একটা কিছু রয়েছে বলে ধারণা দেন।
সে অনুযায়ী স্বজনরা রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। সেখানে পর্যাপ্ত সেবা না পেয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষা শেষে নিশ্চিত হন লিমা আক্তারের পেটে রক্ত পরিস্কার করার 'মব' (কাপড়) টুকরো রয়েছে, দ্রতই অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানানো হয়।
৩ জুলাই গভীর রাতে চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ. এইচ. এম. শাখাওয়াত হোসেন দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করে ওই নারীর পেট থেকে ১৮ ইঞ্চি সম আকৃতির এক 'মব' কাপড়ের টুকরো বের করেন। বর্তমানে ভুক্তভোগী নারী ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগী নারীর বড় ভাই জহিরল ইসলাম বলেন, সিজার অস্ত্রোপচার করার পর তাঁর বোন মৃত্যু পথযাত্রী। পেটে ইনফেকশন হয়ে গেছে, এখনো পেট ফুলে আছে।
দুর্গন্ধ বের হওয়াসহ ব্যথায় প্রতিনিয়ত কাতরাচ্ছে সে। দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে মিলিয়ে ৫ দিন তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হয়েছে। এখনো সে সংকটাপন্ন। শিশুটিও মায়ের সেবা এবং বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত, ঝুঁকিতে আছে শিশুটিও। এ অবস্থায় পরিবারটি মানসিক ও আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
তিনিও আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে নরসিংদীর সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করেছি। বিএমডিসিতে অভিযোগ করবো এবং পারিবারিক সিদ্ধান্তের পর মামলা করব। আমরা এরকম জঘন্যতম চিকিৎসার প্রতিকার চাই।
এ বিষয়ে নরসিংদী সিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন মিয়া বলেন, বিষয়টি জানার পর খোঁজ-খবর নিয়েছি, রোগীর বাড়িতেও গিয়েছি। দেড় লাখ টাকায় সমঝোতা করার চেষ্টা করেছি। তারা আরও অনেক বেশি টাকা চাচ্ছেন। ভুল করে ঘটনাটি হয়ে গেছে, সেটিতো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আমরা রোগীর চিকিৎসার দায়িত্বও নেয়ার কথা বলেছি।
নরসিংদীর সিভিল সার্জন সৈয়দ মো: আমিরল হক শামীম বলেন, ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরকম জঘন্যরকম ভুল হতে পারে না। শুনেছি রোগী সংকটাপন্ন। রোগীর জীবন বিপন্ন করে তুলে এত বড় ময়লা পরিস্কার করার' মব' কাপড় পেটে রেখে সেলাই করে ফেলেন কিভাবে? এর প্রতিকার দরকার।
আরও পড়ুনঃ বছরে ৭ মাস ভওখালী স্কুল জলাবদ্ধ থাকায় পাঠদান ব্যহত
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.