মোস্তাকিন হোসেন,পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে বিএনপি ও জামায়াতের তকমা দিয়ে উপজেলার মোলান গ্রামীণ সড়কটি উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত । প্রায় ৮টি গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির বেহাল দশা। কৃষি পণ্য ও মালামাল আনা নেওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী,রোগীসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে চলাচলে কষ্ট পোহাতে হয়। বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। জনদুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার অবসান ঘটাতে রাস্তাটি পাকা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মোলান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার মোলান গ্রামের শেষ সীমানা বাঁশমুড়িজুতমুন পর্যন্ত কাঁচা এই রাস্তা দিয়ে আশপাশের ৮টি গ্রামের বাসিন্দারা চলাচল করে থাকেন। প্রত্যেক বছর বর্ষা মৌসুম এলেই বৃষ্টিতে কাদা জমে এসব গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গ্রামবাসী বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও রাস্তাটি পাকা করণের উদ্যোগ নেয়নি ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক এমপি সামছুল আলম দুদু। এতে প্রায় ৮টি গ্রামের ৮ থেকে ১০ হাজার বাসিন্দা ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি দেখে মনে হয় হাল চাষ করার জমি। কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়ে চলাচলে এলাকাবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ শিশু শিক্ষার্থী ও পথচারী এবং মসজিদের মুসল্লিদের চলাচলে দুর্ভোগের শেষ নেই।
গ্রামবাসীরা ক্ষোভের সাথে বলেন, এমপি,চেয়ারম্যান নির্বাচনের সময় এসে বড় বড় কথা বলে যায়। নির্বাচন পার হলে তারা আর এলাকায় আসে না। আমরা এই এলাকার মানুষ কি অপরাধ করছি জানিনা, যার খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে। গ্রামের রাস্তার এমন বেহাল দশা যে বর্ষা মৌসুমে আমরা ভয়ে ঘর থেকে বাহির হতে পারিনা। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না এমনকি এই এলাকার ছেলে-মেয়েদের কেউ বিয়েও করতে চায় না। আমাদের গ্রামটি কৃষির উপর নির্ভরশীল। বর্ষা মৌসুমে আমরা ধান বাজারে বিক্রি করতে পারিনা। এই রাস্তাটির কারণে আমরা ধান চালসহ অন্যান্য কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাইনা। সময় মতো বাজার করতেও পারিনা। সব দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে আমাদের মোলান গ্রামটি।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব বলেন, আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি কিন্ত আমাদের গ্রামের রাস্তাটির কোন উন্নয়ন দেখিনি। রাস্তাটির কারণে স্কুল, কলেজে যাতায়াত কষ্ট কর। কোন মানুষ অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে পারিনা। আমাদের গ্রামটি কি মানচিত্রের বাহিরে না কি আমাদের গ্রামের মানুষ সরকারকে কর দেয়না।
মোলান গ্রামের বাসিন্দা ৮০ থেকে ৯০ বছরের অবিদা বেওয়া বলেন,আমার বিয়ে হওয়ার পর থেকে এই রাস্তাটির কোন উন্নয়ন দেখিনি। আমি বয়স্ক মানুষ। আমি মানুষের বাড়ি থেকে চায়েচিন্তে এনে খাই। কিন্ত বর্ষা মৌসুমে হাটু পর্যন্ত কাদার কারণে আমি বের হতে পারিনা। আমি এই কাদায় পিছলে পড়লে আর উঠতে পারিবো না। রাস্তাটি কারণে আমার খাওন জোগাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
মোলান গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কবিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই রাস্তাটি নিয়ে একাধিক বার আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক এমপি দুদুর কাছে গিয়ে ছিলাম। তিনি তখন আমাদের বলেন আপনারা তো জামায়াত-বিএনপি। আপনাদের কোন কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। আমি কি আপনাদের ভোটে এমপি হয়েছি। আমি বিনা ভোটে এমপি হয়েছি। আমি কি জন্য আপনাদের কাজ করবো। রাস্তাটির এমন করুন অবস্থা বর্ষা মৌসুমে বাড়িতে যেতে পারিনা। দোকানেই থাকি। মোলান গ্রামের বাসিন্দারাই শুধু এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেনা পার্শ^বর্তী হাকিমপুর উপজেলার বাঁশমুড়ি জুতমুন, কাশিয়াডাঙ্গা, শনপাড়া, মাটিকাটা, কুশাপাড়া, ধাওয়া নশিপুরের মানুষও এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। আমাদের গ্রামের রাস্তাটি দ্রুত পাকা করণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মোলান গ্রামের বাসিন্দা ও সড়াইল কলেজে প্রভাষক সেকেন্দার আলী বলেন,স্বাধীনতার আগে আমাদের গ্রামের এই রাস্তাটি হয়েছে। আজ পর্যন্ত রাস্তার অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি। এই গ্রামের মানুষ কৃষিজিবি, মৎস্যজিবি, গবাদি পুশু পালন করে থাকে। আমাদের গ্রামটি কৃষির উপরে নির্ভরশীল। কিন্ত বর্ষা মৌসুম এলে রাস্তার কারণে আমরা ধান চালসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য বিক্রি করতে পারিনা। রাস্তাটি দ্রুত পাকা করণ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
এবিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা নিবার্হী অফিসার রোমানা রিয়াজ বলেন,বিষয়টি দেখছি কি করা যায়।
আরও পড়ুনঃ নরসিংদীতে হত্যা ডাকাতিসহ একাধিক মামলার আসামী গ্রেপ্তার
Leave a Reply