জামাল উদ্দীন, কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫ খ্রী: মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি খুনী ওসি প্রদীপ কুমার দাসের হাতে অমানবিক নির্যাতনের শিকার কক্সবাজারের সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৬টি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি। ফলে সাংবাদিক ফরিদ মোস্তফা পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীন ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
অবিলম্বে সাংবাদিক ফরিদ মোস্তফার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম। বৃহস্পতিবার ১৫ মে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর বলেন, রাষ্ট্রীয় আইন ও বিচার বিভাগ আন্তরিক হলেই কেবল মামলা গুলো প্রত্যাহার করতে পারে। একই সাথে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র করে একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা এবং চিকিৎসা খরচ বহনের ব্যাপারেও আদালত আদেশ দিতে পারেন। আমরা আশা করছি, সরকার দ্রুত মামলা গুলো প্রত্যাহার করা হবে।
বিগত ৫ বছর আগে জামিনে কারামুক্তির পর এবং এর আগে পরিবারের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর, ডিসি, এসপি সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে আবেদন নিবেদন করা হলেও রহস্যজনক কারণে তা ঝুলে আছে, প্রত্যাহার হয়নি মামলা। শুধু আবেদনের রিসিভ কপি আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়া এই মুহূর্তে ফরিদুল মোস্তফার আর কিছুই নেই।
ফরিদ মোস্তফা বলছেন, ওসি প্রদীপের মৃত্যুদন্ডাদেশ একটি যুগান্তকারী রায়। তবে প্রদীপের মামলার বোঝা আর সইতে পারছিনা। মামলা ও চিকিৎসা চালাতে আর্থিক দৈন্যদশায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছি। আমি পরিত্রাণ চাই, আমাকে উদ্ধারে দেশের সকল সাংবাদিক বন্ধুদের পাশে চাই ।
সূত্রমতে, বিচার বহির্ভুত মানুষ হত্যা, উখিয়া টেকনাফের সাবেক এমপি মাদকের গডফাদর আবদুর রহমান বদি, ওসি প্রদীপ এবং তার লালিত মাদক ঘুষ সিন্ডিকেটের মাদক নির্মুলের নামে নিজেদের মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে “টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দেন টেকনাফের ওসি প্রদীপ” শিরোনামে ২০১৯ সালে কয়েকটি সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি তৎকালীন কক্সবাজারের সাবেক পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়েন। ফলে সেই সময়ে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে দেখা করে জীবনের নিরাপত্তা এবং মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে আবেদন করেন ফরিদুল।
কিন্তু দুর্ভাগ্য জুলুম নির্যাতন হয়রানি থেকে রেহাই পাওয়াতো দুরের কথা ফরিদুল মোস্তফা কে বিনা মামলায় ঢাকা থেকে ওসি প্রদীপের টেকনাফ থানা পুলিশ তুলে এনে ২০১৯ সালে কয়েক দিন আটকে পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজীর ৬ সাজানো মামলা দিয়ে চালান দেন আদালতে।
তবে আশ্চর্যের বিষয় ঐ সময়ে ওসি প্রদীপের ভয়ে ফরিদ মোস্তফার ওপর অমানবিক নির্যাতন এবং ৬টি মামলায় জড়িয়ে হয়রানি, গ্রেফতারের খবর কোনো মিডিয়ায় প্রচারের সাহস পায়নি। কারাবন্দী ঘটনার সাড়ে ১০ মাস পর বিষয়টি বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। তখন সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে ঢাকা থেকে সাংবাদিকদের ৭ সদস্যের একটি টিম কক্সবাজারে যান। সেখানে গিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের পাশাপাশি সংগঠনের আইন উপদেষ্টা পরিষদ ও শাখা কমিটির সদস্যদের অংশগ্রহণে বৈঠক করে আইনী লড়াইয়ে নামে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আইনী লড়াইয়ে তিনি টানা ১১ মাস ৫ দিন কারাভোগ করে জামিনে মুক্তি পান । অসুস্থ অবস্থায় কারাগার থেকে বের হবার পর চিকিৎসার জন্য বিএমএসএফ তাকে এক লাখ টাকা চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে।
এদিকে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে ফরিদ মোস্তফা একটি মামলা দায়ের করলে গত ৫ বছর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি।
আরও পড়ুনঃ দিনাজপুরে বিএডিসির যুগ্ম পরিচালকের অফিসে দুদুকের অভিযান
Leave a Reply