মালিকুজ্জামান কাকাঃ রেল যাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও যশোর রেলওয়ে হাসপাতাল স্থানীয় অধিবাসীদের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র ছিল।
কিন্ত সেটি প্রায় দুই যুগ আগের কথা।
আজ সেই হাসপাতাল পরিত্যক্ত পড়ে আছে। যখন কর্তৃপক্ষ রেলওয়ে হাসপাতালগুলোর সেবার মান বাড়াতে কাজ করছে ঠিক সেসময় যশোরের হাসপাতালে চলছে মাদক সেবীর আড্ডা। অন্যদিকে, হাসপাতালের সেবাকক্ষে বসবাস করছেন যারা এর সাথে সম্প্রীক্ত নন এমন মানুষ। যা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়সহ রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে।
অভিযোগ উঠেছে, যশোর রেলওয়ে হাসপাতালের অনুকুলে এখনো বিভিন্ন ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী বরাদ্দ আসে। কিন্ত তা চলে যাচ্ছে অন্যত্র। একই সাথে দ্রুত এই হাসপাতাল চালুর দাবি উঠেছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হাসপাতালগুলোতে এখন থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীর পাশাপাশি সাধারণ জনগণও চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন। গত ২১ এপ্রিল সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মধ্যে এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান নিজ নিজ দপ্তরের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
সমঝোতা স্মারকের শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হাসপাতালগুলো রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, রেলপোষ্য ও রেলওয়ের যাত্রীসাধারণের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের জন্য চিকিৎসা সুবিধা উন্মুক্তকরণ এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে চিকিৎসা সেবা দেবে। দেশের বিভিন্ন শহরে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে।
অন্যদিকে রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হাসপাতালগুলোতে রোগীর উপস্থিতি একেবারেই নগণ্য।যৌথ ব্যবস্থাপনায় রেলওয়ে হাসপাতালগুলো সর্বসাধারণকে সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হলে অধিক সংখ্যক মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে স্বাস্থ্য সেবা দিতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এই সিদ্ধান্তের পর আলোচনায় উঠে আসে যশোর রেলওয়ে হাসপাতাল। হাসপাতালের অবকাঠামোসহ নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকা সত্বেও কেন যশোর রেলওয়ে হাসপাতাল পরিত্যক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহলে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতালগুলোর সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি এ সমঝোতা স্মারকের শর্ত অনুযায়ী যৌথভাবে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত/পরিচালিত হবে। বিদ্যমান জনবল কাঠামোর অধীনে নিয়োগকৃত জনবলের প্রশাসনিক, সংস্থাপনিক কার্যক্রম বাংলাদেশ রেলওয়ের আওতায় আগের মতো বলবৎ থাকবে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত ইনভেনটরি কমিটির প্রস্তুতকৃত তালিকা অনুসারে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ হাসপাতালের সব অস্থাবর সম্পত্তি বুঝে নেবে। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ও বিয়োজনের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করবে। রেলওয়ে হাসপাতালে বিদ্যমান জনবল কাঠামোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ না থাকায় উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংযুক্তিতে পদায়নে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
সমঝোতা স্মারকের আওতায় রেলওয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সেবা প্রদান ফি বাবদ আদায়কৃত অর্থের ব্যবস্থাপনা সরকারি হাসপাতালগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধিবিধান অনুযায়ী হবে। হাসপাতালগুলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য সচিব, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সদস্যদের সমন্বয়ে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা এবং প্রতিটি হাসপাতালের জন্য পৃথক স্থানীয় যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকবে। এই ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন ও কার্যপরিধি সরকার কর্তৃক আদেশে নির্ধারণ করা হবে।
Leave a Reply