মোঃ আব্দুস সামাদ শৈলকুপা প্রতিনিধি:
গ্রীষ্মের উষ্ণ দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল নামে উড়ে উড়ে, তখন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সিদ্ধি পশ্চিমপাড়া যেন এক রসস্নাত মাধুর্যের আঙিনা হয়ে ওঠে।
রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মাটির টংঘর আর কয়েকটি কলস—তার মাঝেই জমে ওঠে এক টুকরো বাংলার প্রাণ। সেখানে মোঃ আফজাল হোসেন ও তার ছেলে মোঃ হোসাইন বিক্রি করেন প্রকৃতির অমূল্য ধন—তালের রস।
প্রতিদিন সকালেই তাঁরা তালগাছ থেকে সংগ্রহ করেন সতেজ রস, আর বিকেল হতেই সে রস নিয়ে বসেন রাস্তার পাশে। শুধু স্থানীয় নয়, অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ ছুটে আসে এই স্বাদ নিতে। যেন এই রসেই আছে প্রাকৃতিক প্রশান্তির গোপন রহস্য। একবার জিভে লাগতেই শরীর শীতল হয়ে যায়, ক্লান্ত মন পায় শান্তির পরশ।
আফজাল হোসেন জানান, “রোজই দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার রস বিক্রি হয়। সবাই খেয়ে প্রশংসা করে। কেউ কেউ তো সপ্তাহে দুই-তিনবার আসে।”
তালের রস এখানে শুধু পানীয় নয়—এ যেন মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির আত্মার মেলবন্ধন। ছায়াঘেরা বিকেলে তালগাছের নিচে দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডা রসের চুমুকে যে প্রশান্তি, তা কোনো দাম দিয়ে মাপা যায় না। কেউ খাচ্ছে দাঁড়িয়ে, কেউবা বাইকে বসে; কেউ আবার মোবাইল হাতে করে সেলফি তুলছে মাটির কলসকে পেছনে রেখে।
সেই রসে স্বাদ যেমন আছে, তেমনি আছে অর্থনীতির হাতছানি। আফজাল ও হোসাইনের এই রস বিক্রি একটি ছোট উদ্যোগ হলেও প্রতিদিনের আয়ে তা একটি পরিবারের জীবিকা, স্বপ্ন আর পরিশ্রমের প্রতিফলন।
তবে এখানেই শেষ নয়। এমন উদ্যোগ যদি ছড়িয়ে পড়ে, যদি নতুন তালগাছ রোপিত হয়, যদি আরও মানুষ এই প্রাকৃতিক পানীয়ের স্বাদ নিতে আসে—তবে একদিন শৈলকুপা হয়ে উঠতে পারে তালের রসের এক অনন্য স্বর্গভূমি।
এই রস শুধু শরীর ঠাণ্ডা করে না—এ যেন বাংলার মাটি, গাছ, শ্রম আর ভালবাসার এক মধুর দান।
আরও পড়ুন এয়ারপোর্ট থেকে আটক সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুম
Leave a Reply