নড়াইল প্রতিনিধিঃ একদিন পরই পহেলা বৈশাখ। নতুন বছরকে বরণ করতে দেশের নানা প্রান্তে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আর বৈশাখী মেলা মানেই রঙিন খেলনা, মুখোশ, আর মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিলের ছড়াছড়ি।
আসন্ন বৈশাখী মেলা সামনে নড়াইল জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাল পাড়ায় মৃৎশিল্পিদের ব্যস্ততা বেড়েছে। মৃৎশিল্পীরা বাহারি সব মাটির খেলনাসহ বিভিন্ন ধরণের জিনিস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শেষ মুহূর্তে পালবাড়ির নারী সদস্যরা মাটির তৈরি খেলনায় রং তুলির আঁচড় দিচ্ছেন। পাল পাড়া গুলোতে এখন দিনরাত এক করে চলছে মাটির শিল্পের প্রস্তুতি। পহেলা বৈশাখে নড়াইল জেলায় একাধিক স্থানে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা বসে।
এসব মেলায় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের বেশ চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের কাছে মাটির তৈরি খেলনা সামগ্রী বেশ চাহিদা রয়েছে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে লোহাগড়া উপজেলার কুন্দশী গ্রামের পাল পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, পাল-পরিবারের নারী-পুরুষ সদস্যরা বিভিন্ন মাটির খেলনাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের যেন কথা বলার সময়টুকুও নেই। শিশুদের খেলনা হিসাবে রয়েছে মাটির পুতুল, হাতি, ঘোড়া, দোয়েল পাখি, ময়না পাখি, টিয়া পাখি, হাঁস-মুরগি, মাটির ব্যাংক, মগ, গøাস চায়ের কাপ, পিঠা তৈরির ছাঁচসহ নানা জাতের ফুল ফুলদানি। এ ছাড়া রয়েছে পালেদের চিরাচরিত তৈরি মাটির হাঁড়ি-পাতিলসহ গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি।
লোহাগড়ার কুন্দসী পালপাড়ায় ভোর ৫টা থেকে চাকা ঘুরিয়ে কলসী, হাঁড়ি, ঢাকনা তৈরি করছেন কারিগর প্রভাষ পাল। পাশে স্ত্রী ল²ীরানী পালও ব্যস্ত রঙতুলির কাজে। রীতিমতো শিল্পীর নিপুণ হাতে মাটি যেন প্রাণ পাচ্ছে।
প্রভাষ পাল বলেন,‘বৈশাখ মাসে ধর্মীয় রীতিতে চাকা বন্ধ রাখতে হয়। তাই এখন রাতদিন কাজ করছি। চাহিদা বেশি, সময় কম।’
উপজেলার কুন্দশী গ্রামের তপন পাল বলেন,‘বছরের এই একটা উৎসব ঘিরে আমাদের অনেক আশা থাকে। এমনিতে সারা বছর মৃৎশিল্পের তেমন চাহিদা থাকে না। এখন আর মাটির জিনিসের তেমন কদরও নেই। সারা বছর টানাপোড়েনে চলতে হয়। আজকাল এই কাজ করা পূর্বপুরুষের পেশা ধরে রাখার চেষ্টা মাত্র। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও সামগ্রীর চাহিদা থাকে। তাই এ সময়টায় কিছু আয় হয়।’
অর্চনা পাল বলেন,‘পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলায় শখের বসে অনেকেই মাটির সামগ্রী বিশেষ করে মাটির খেলনা কেনে। তাই এই সময়ে আমাদের কিছুটা কর্মব্যস্ততা বাড়ে। কিন্তু এসব তৈরিতে প্রধান উপাদান এঁটেল মাটির অভাব। তার ওপরে রঙের দাম বাড়তি। সে অনুযায়ী পণ্যের দাম ততটা বাড়েনি।’
শুধু কুন্দসী নয়, জেলার রাধানগর, কুমোরডাঙ্গা, দলজিতপুর, রতডাঙ্গা, রায়গ্রাম ও মুলিয়াসহ শতাধিক এলাকায় কুমোরদের ঘরে এখন উৎসবমুখর ব্যস্ততা। কেউ চাকা ঘুরিয়ে বানাচ্ছেন তৈজসপত্র, কেউ আবার ছাঁচে তৈরি করছেন ঘোড়া-হাতি, ব্যাংক, মাটির পুতুল, কিংবা বৈশাখী মুখোশ। এই কাজে নেই বয়সের সীমা। বুড়ো থেকে শিশু সবাই হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন বৈশাখী উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তুলতে।
মাটির গন্ধ মেখে গড়ে উঠছে বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য। চলতি মাসের নানা বৈশাখী মেলায় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে এসব পণ্য। নড়াইল শহর, লোহাগড়া, কালিয়া ও আশপাশের গ্রামীণ বাজারে বসবে বৈশাখী মেলা, যেখানে মৃৎশিল্পীদের এসব পণ্য থাকবে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
নড়াইল বিসিক কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সোলায়মান হোসেন বলেন,‘সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অনবদ্য রূপ মৃৎশিল্প। এর সঙ্গে একদিকে জড়িয়ে আছে পালেদের জীবিকা আর অন্যদিকে নান্দনিকতা ও চিত্রকলার বহিঃপ্রকাশ। মৃৎশিল্প বাঙালির নিজস্ব শিল্প, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের অংশ। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিসিকের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।,###
আরও পড়ুনঃ সরিষাবাড়ীতে কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তির অর্থ ও সনদ বিতরন
Leave a Reply