পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ আর মাত্র ৮ দিন পরে আগামী ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মধ্যেও উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
এই নির্বাচনে দুটি পরিষদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একটি মোস্তাক-জালাল পরিষদ,অন্যটি বর্তমান সভাপতি ছায়েম,সাধারণ সম্পাদক লাবু পরিষদ। তবে মোস্তাক-জালাল পরিষদের নির্বাচনি প্রচার প্রচারণা বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে বলে জানান ভোটাররা। আগামি ১৯ এপ্রিল সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত গোপন ব্যালট পেপারে মাধমে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। মোট ভোটার ১৩৮৭।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে ঢিলে ঢালাভাবে চললেও শেষ মুহূর্তে এসে জমে উঠেছে উপজেলা ইমারত নিমার্ণ শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন। উপজেলা জুড়ে নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়েছে পুরোদমে। চায়ের কাপেও নির্বাচনী আসর জমে উঠছে পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে সব এলাকায়। গত নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচন উত্তাপহীন বলে মনে করছেন সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। উপজেলার সর্বত্রজুড়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদের প্রার্থীদের পোষ্টার ব্যানারে ছেয়ে গেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলছে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা,উঠান বৈঠক ও পথসভা। এবারের পাঁচবিবি উপজেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক সাধারণ নির্বাচনে সভাপতি পদে ২ জন প্রার্থী, সাধারণ সম্পাদক পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়াও অন্যান্য পদেও ২ জন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েক জন শ্রমিক বর্তমান কমিটির উপরে আক্ষেপ করে বলেন,আমরা যারা শ্রমিক আমাদেরও তো চাওয়া পাওয়া থাকে। কিন্ত বিগত যারা নির্বাচিত হয়েছে তারা শুধু আশার বানী দিয়ে ভোট নেয়। সে সময় তারা বলেন আমরা নির্বাচিত হলে অমুক দিব,তমুক দিবো। কিন্ত আমরা যারা শ্রমিক আছি ওই ইউনিয়নে তারা সকলে চাঁদা দিয়ে থাকি। কিন্ত আমাদের শ্রমের টাকা থেকে চাঁদা দিয়ে থাকি তাহলে কোন দুর্ঘটনা বা ঈদ পর্বে কোনো কিছুই পাইনা কেন। আমরা শ্রমিকরা দুর্ঘটনা বা ঈদ পর্বে কেন কিছু পাইনা সেটা বর্তমান কমিটির কাছে জানতে চাই। আমরা শ্রমিক আমাদেরও তো একটা আশা থাকে। আমরা যে শ্রমের টাকা চাঁদা দিয়ে থাকি সেই টাকাগুলো যায় কোথায়। তারা বলে এত টাকা আয় হয়েছে এত টাকা ব্যয় হয়েছে। আমাদের শ্রমিকের টাকাগুলো কোথায় ব্যয় হয় তা আমরা বর্তমান কমিটির কাছে জানতে চাই। তারা যে হিসাব দেয় তা আয়ের থেকে ব্যয় বেশি দেখায়। আমাদের হাড়ভাঙ্গা শ্রমের টাকা কোন খাতে ব্যয় করে তা আমরা জানতে চাই বর্তমান কমিটির কাছে। আমরা এবার ভোট দিব যারা কথা দিয়ে কথা রাখে তাদেরকে আমরা নির্বাচিত করিব। প্রতি বছর ঈদ পর্বে আমাদের একটা আশা থাকে যে শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে কিছু পাবো। আমাদের স্বার্থ থেকে নিয়ে যায় কিন্ত বর্তমান কমিটি দিতে জানেনা।
শ্রমিকেরা আরও বলেন, উপজেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নে শ্রমিকরা কেন যুক্ত হয়। কারণ ইউনিয়নের সাথে যুক্ত থাকলে কোন মালিকের বাড়িতে কাজ করার সময় কোনো শ্রমিকের দুর্ঘটনা ঘটলে তার পাশে দাড়ানো,কোন অসহায় শ্রমিক তার মেয়েকে বিয়ে দিতে পারছে সেই শ্রমিককে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করায় শ্রমিক ইউনিয়নের কাজ। কিন্ত এই শ্রমিক ইউনিয়নে শ্রমিকরা নিজের টাকা রেখে বিপদের সময় তারা পায়না। আমরা এবার পরিবর্তন চাই। স্বৈরাচারী সরকারের আমলে যারা নির্বাচিত হয়েছে তাদের পরিবর্তন চাই আমরা।
মোস্তাক-জালাল পরিষদে সভাপতি পদে মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক হাতুরী মার্কা,সাধারণ সম্পাদক পদে জালাল উদ্দিন চাকা মার্কা,সাংগঠনিক সম্পাদক পদে হারুনুর রশীদ চেয়ার মার্কা,দপ্তর সম্পাদক পদে দেলোয়ার হোসেন মিক্সার মেশিন মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন। এদিকে প্যানের বাহিরে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আবদুস সালাম বিশু দেওয়াল ঘড়ি মার্কা,কোষাধ্যক্ষ পদে সাদেক আলী বালতি মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন।
সভাপতি পদপ্রার্থী মোস্তাক শ্রমিকদের উদেশ্য ইসতিহার প্রকাশ করে বলেন, আমি নির্বাচিত হলে ন্যায্য মজুরি ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ,শ্রমিকদের উপযুক্ত মজুরি নিশ্চিত করতে ঠিকাদার ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষা,শ্রম আইন সম্পর্কে শ্রমিকদের সচেতন বৃদ্ধি করা। অসুস্থতা ও দুর্ঘটনায় ক্ষতি হলে সহায়তা প্রদান,কর্মক্ষেত্রে আহত শ্রমিকদের জন্য জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রদান। নতুন শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা। আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান, কল্যাণমূলক কার্যক্রম শ্রমিকদের জন্য সঞ্চয় ও পেনশন স্কিম চালু করা হবে। উৎসব ভাতা, শিক্ষা সহায়তা ও আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে। শ্রমিক পরিবারের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং তাদের ন্যায্য অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বদা সক্রিয় থাকবো।
Leave a Reply