মালিকুজ্জামান কাকাঃ ফুল মার্কেট, ২০২১ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় গদখালি-পানিসারা এলাকায় ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এক একর জমিতে আধুনিক ফুল মার্কেট নির্মাণ করা হয়। দৃষ্টিনন্দন ভবন, বীজ সংরক্ষণ হিমাগার,
ফুল প্যাকেজিং মেঝে ও শেড থাকলেও এখানে বেচাকেনা তো দূরের কথা, বীজ সংরক্ষণও হয় না। ফুলচাষিরা প্রতিদিন মাঠ থেকে ফুল নিয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে গদখালি বাজারে বিক্রি করেন।
মার্কেট নির্মাণের পর জমির মালিকানা জটিলতা ও আয়-ব্যয় ব্যবস্থাপনার নীতিমালা না থাকায় জেলা প্রশাসন দেরিতে বুঝে নেয়, ফলে উদ্বোধন বিলম্বিত হয়। ২০২২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলেও চাষিদের আগ্রহ মেলেনি।
চাষিরা জানান, পানিসারার এই মার্কেট গদখালি বাজার থেকে দূরে হওয়ায় পরিবহন খরচ ও কষ্ট বেড়ে যায়। উপরন্তু গদখালিতেই ফুল সরবরাহ সহজ হওয়ায় তারা সেখানে থেকেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফুলচাষি নুরনবি বলেন, 'অপরিকল্পিতভাবে মার্কেটটি দূরে নির্মাণ করা হয়েছে। গদখালির চাষিরা সেখানে যেতে চান না। বীজ সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় এখন আলুর হিমাগারে বেশি খরচে ফুলের বীজ রাখতে হচ্ছে।'
একইভাবে গদখালি বাজারের পাশে এক কোটি সাত লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসেম্বল সেন্টারটিও বছরের পর বছর পড়ে আছে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কেউ যায় না সেখানে।
স্থানীয় ফুল উৎপাদক সমবায়ের সভাপতি আব্দুর রহিম অভিযোগ করেন, 'প্রথমে জায়গার মালিকানা সমস্যা ছিল, পরে তা মিটলেও গদখালির বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রভাবশালীরা মার্কেটটি চালু হতে দিচ্ছে না।'
বাংলাদেশ-আমেরিকার সৌহার্দ্য ফুল বিপণন কেন্দ্র।
যশোরের ঝিকরগাছার পানিসারায় রয়েছে বাংলাদেশ-আমেরিকার সৌহার্দ্য ফুল বিপণন কেন্দ্র ও কোল্ড স্টোরেজ। অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে অনেক আগে। ফুলের রাজধানীর বহুল কাঙ্খিত এই কেন্দ্রটি চালুর অপেক্ষা। আর এটি চালু হলে চাষিরা এখানে ফুল ও বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। ফলে খরচ কমবে তাদের।
ইতোমধ্যে যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের কাছে কেন্দ্রটির কাগজপত্র ও চাবি হস্তান্তর করেছে ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, কেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্দেশ্য আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফুল সংগ্রহের পর ফুলের ব্যবস্থাপনা, ফুল ও বীজের গুণগতমান উন্নয়ন ও বীজ সংরক্ষণ। অর্থাৎ ফুলের ‘সর্টিং, গ্রেডিং ও প্যাকেজিং’ করা। এর মাধ্যমে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন।
মূলত ফুল চাষিদের উন্নয়নে কেন্দ্রটি ভূমিকা রাখবে বলে স্থানীয় ৯ কৃষক শর্তসাপেক্ষে কেন্দ্র নির্মাণে এক একর জমি দেন। গদখালী-পানিসারা গ্রামের ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র, কোল্ড স্টোরেজ ও আধুনিক ফুল বাজারের। তাদের সেই দাবি পূরণে ফুল বিপণন কেন্দ্র ও স্টোরেজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
আমেরিকান দাতা সংস্থা ইউএসএইডের সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ঝিকরগাছার পানিসারা বাংলাদেশ-আমেরিকার সৌহার্দ্য ফুল বিপণন কেন্দ্র নির্মাণ করে। ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এক একর জমিতে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালের ৩০ জুন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও চুক্তির একটি শর্তের কারণে কেন্দ্রটি হস্তান্তর করা যাচ্ছিল না।
তবে সমস্যা নিরসণের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের কাছে প্রতিষ্ঠানটি হস্তান্তর করা হয়।
আপাতত বীজ সংরক্ষণ করা হবে। ফলে কৃষকদের বাইরে কোথাও বীজ রাখা লাগবে না। কিংবা প্রতিবার চাষের সময় বীজ কেনা লাগবে না।
এখানে পর্যায়ক্রমে ফুলের গ্রেডিং, সর্টিংসহ সংরক্ষণ করা যাবে। এই কেন্দ্রে কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া যাবে।
ফুল চাষীরা জানান, কোল্ড স্টোরেজে বীজ সংরক্ষণ করা যায়। ফুলের গ্রেডিং ও সর্টিং করা যাবে। এছাড়া যদি কোনদিন ফুল বিক্রি না হয় তাহলে কোল্ড স্টোরে রেখে পরদিন সেই ফুল বিক্রি করা যাবে।
ফুলচাষী ইসমাইল হোসেন বলেন, এই অঞ্চলের চাষিদের প্রাণের দাবি ছিল কেন্দ্রটি চালুর। শুধু বিদ্যুৎ সংযোগটা হলে কেন্দ্রটি চালু হবে। এই অঞ্চলে সম্ভাবনার ফুলচাষ হলো গ্লাডিওলাস। শুধু বীজ সংরক্ষণের অসুবিধার কারণে চাষিরা আগ্রহ হারাচ্ছিল। এখন সেই সমস্যার সমাধান হবে।
নারী ফুলচাষি সাজেদা বেগম বলেন, আগে যশোরের ঝুমঝুমপুর বিএডিসি কোল্ড স্টোরেজে অনেক কষ্ট করে বীজ রাখতে হত। নারী হওয়ায় সেটা আমার জন্য খুবই কষ্টের কাজ। এখন ঘরের কাছেই কম খরচে বীজ রাখা সম্ভব। এছাড়া শীতের ফুল লিলিয়ামের বীজ রেখে পারলে আমার অনেক টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
ইউএনও অফিস সূত্রে জানা যায়, নির্মাণ কাজ শেষ হলেও বিভিন্ন জটিলতায় ফুল বিপণন কেন্দ্র চালু করা যায়নি। পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিষ্ঠানটি সচল করা হচ্ছে। ফলে যন্ত্রপাতিও ভাল থাকবে এবং কৃষকরাও উপকৃত হবেন। ইতোমধ্যে যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের কাছে কন্দ্রটি পরিচালনা করার অনুমতি দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন গাজায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁওয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.