গাইবান্ধা থেকে মোঃ আবু জাফর মন্ডলঃ গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সবজি চাষ, বোরো ধান ও রবিশষ্য চাষবাদ বাদ দিয়ে তামাক চাষে ঝুঁকছেন অনেক কৃষক। বেশি লাভের আশায় তামাক কোম্পানিগুলোর প্রলোভনে পড়ে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে তামাক চাষে জড়িয়ে পড়েন কৃষকেরা। চলতি বছর উপজেলায় ৮ হেক্টর এর বেশি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিস।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কিশোরগাড়ী,বড় শিমুল তলা,বাড়াইপাড়া, ঝালিঙ্গি সহ বেশকিছু এলাকায় তামাকের ক্ষেত।
তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিমাত্রার সার-কীটনাশক ও তামাকের রাসায়নিক উপাদান ক্রমেই অন্য জমি ও জলাশয়ের পানিতে মিশে পানিদূষণ করছে। বর্তমানে যা অনিরাপদ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ডিম পাড়ার পরিস্থিতিতে কীটনাশকযুক্ত পানির কারণে মাছ বংশ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ হারাচ্ছে।
বেশকিছু উর্বর জমি এখন তামাকের দখলে। অথচ এসব উর্বর জমিতে আগে ভুট্টা, সরিষা, শাকসবজি, বোরো ধানের চাষাবাদ হতো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই তামাকের ক্ষতিকর নিকোটিনের প্রভাবে ভূমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। তামাক চাষকৃত জমিতে অন্য ফসল সহজে হয় না। ফসলের জন্যে হুমকিস্বরূপ এই বিষাক্ত তামাক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক রোপন থেকে শুরু করে পাতা কাটা এবং শুকানো পর্যন্ত এর সকল প্রক্রিয়াতে রয়েছে বিষাক্ত নিকোটিন উপাদান। কৃষকরা ভয়াল এ বিষ সম্পর্কে জানার পরেও বাড়তি লাভের আশায় তামাক চাষে ঝুঁকছে। এর পরিচর্যায় কৃষকরা নিজেদের পাশাপাশি পরিবারের স্ত্রী ও কোমলমতি শিশুদেরও ব্যবহার করছে। ফলে বাড়ছে ক্যানসারসহ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। স্বাস্থ্য ও পরিবেশে ঝুঁকি জেনেও অনেকেই অতিরিক্ত লাভের আশায় তামাক চাষ ছাড়তে পারছে না।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে বিভিন্ন সংগঠন সচেতনতার কাজ করলেও কৃষকের পক্ষ থেকে তামাক চাষ বন্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে অনেকটা বিনা বাধায় স্থানীয় কৃষকদের জিম্মি করে নানা প্রলোভন দেখিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিবছর তামাক চাষে বিনিয়োগ করে আসছে।
বাশঁকাটার মাহাবুব রহমান নামে এক কৃষক বলেন, তামাক চাষ আসলেই ক্ষতিকর উপাদান আছে। কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে বাধ্য হয়ে তামাক চাষ করতে হয়। ফসলের চেয়ে তামাক চাষ করলে টাকা বেশি পাওয়া যায়। তাই অধিকাংশ কৃষক লাভের আশায় ফসলের পরিবর্তে তামাক চাষ করতে বেশি আগ্রহী হয়েছেন।
দিন দিন তামাক চাষের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। পাশাপাশি তামাক পোড়ানোর জন্য ভিটেবাড়ির গাছ কেটে উজাড় করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছাঃ ফাতেমা কাওসার মিশু খবরবাড়ি কে জানান, তামাক চাষ আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। এখন শাক সবজি ও রবিশষ্যর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক কৃষকরা তামাক চাষ ছেড়ে অনেকটা ফসলের দিকে ঝুঁকছে। তামাক পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর একটি উপাদান। তামাক চাষের ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। যে ভূমিতে একবার তামাক চাষ করা হয়, সেখানে অন্য কোন ফসল হয় না।
যারা তামাক চাষ করেন, তাদের কৃষি অফিস থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয় না। তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগের কোন নিয়মিত কর্মশালা হয় কিনা জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা বলেন এমন কোন কর্মশালা যদিও নেই তার পরেও ডিজি স্যারের মৌখিক নির্দেশনায় অন্যান্য বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যেই আমরা কৃষকদের তামাক চাষ থেকে সরে আসতে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। এটি অব্যাহত থাকলে তামাক চাষ একেবারে কমে আসবে।
আরও পড়ুনঃ গোপালগঞ্জ জেলার সন্তান শিক্ষা উপদেষ্টা হলেন সি আর আবরার।
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.