মালিকুজ্জামান কাকাঃ কয়েক বছর পর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ফিরেছে পরীক্ষা ব্যবস্থা। এই সুযোগে গাইড নোট ব্যাকরণ নিয়ে বাণিজ্যে নেমেছে প্রকাশনা সংস্থাগুলো। একই সময়ে বাতিল হয়েছে বহুল প্রশংসিত যশোর শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্ন ব্যাংক। বিদ্যালয়গুলো নিজেরা প্রশ্ন করার নামে সাহায্য নিচ্ছে প্রকশনা সংস্থার। যে গাইড থেকে প্রশ্ন হচ্ছে সেই গাইডের কাটতিও বাড়ছে। ফলে সহায়ক বই নিয়ে রীতিমত রমরমা বাণিজ্য চলছে।
মাধ্যমিকের পাঠ্য বই ও পাঠ্য পুস্তকের বিস্তর পরিবর্তন এসেছে চলতি বছর। এক সময় পরীক্ষার গুরুত্ব কিছুটা কম ছিল, তবে বর্তমান সরকার শ্রেণি পাঠ্যের সাথে সাথে পরীক্ষার গুরুত্ব বাড়িয়েছে । শুধু তাইই নয় পরীক্ষা গ্রহণের জন্যে যশোরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রশ্ন ব্যাংকের সহায়তা নিতে হতো। এবার প্রতিটি স্কুল নিজেদের নিজেদের প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়েছে। ফলে পোয়া বারো গাইড-নোট ও ব্যাকরণ-গ্রামার প্রকাশনী সংস্থার। বিদ্যালয়, শিক্ষক, শিক্ষক সমিতিকে ম্যানেজ করে তারা সিলেবাস, প্রশ্ন গছিয়ে দিয়ে চালাতে চাইছেন তাদের প্রকাশিত বইগুলো। ইতোমধ্যে সে সব ব্যাপারে দৌড়-ঝাঁপ শুরু হয়েছে।
যশোরে বই বাণিজ্য নতুন কিছু না। বছরের শুরু থেকে দৌড়-ঝাঁপ-শুরু হয় বিভিন্ন গাইড ও প্রকাশনীগুলোর। কেউ কেউ নভেম্বর থেকেই স্কুল স্কুলে উপহার পাঠাতে শুরু করেন। শ্রেণি পাঠ্য বই সরকারিভাবে দেয়া হয় বলে প্রকাশনা সংস্থাকে যে কোনোভাবেই হোক নোট-গাইড ও গ্রামার ব্যাকরণ বইয়ের উপর তাদের বার্ষিক মুনাফার কথা ভাবতে হয়।
প্রকাশকদের বই বাণিজ্যের প্রধান সঙ্গী বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা। এক সময় পুরোটা নির্ভর করতো শিক্ষক সমিতির উপর। এখন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি প্রতিটি জেলা-উপজেলায় কয়েক কয়েকটি শাখা প্রশাখায় বিভক্ত। এর মূল কারণ প্রকাশনী সংস্থা নির্বাচন ও পছন্দমতো প্রকাশনী থেকে প্রাপ্ত সুযোগ- সুবিধার ভাগাভাাগি দ্বন্দ্ব। তারপরও যশোরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও শহরাঞ্চলের অনেক স্কুলে জননী প্রকাশনী এগিয়ে রয়েছে বলে কয়েকজন শিক্ষক ও বই বিক্রেতার দাবি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বই বিক্রেতা এবং প্রধান শিক্ষক জানান, যে কয়টি প্রকাশনীর বই চলে তাদের মধ্যে রয়েছে জননী, লেকচার, পাঞ্জেরী, অনুপমসহ আরো কয়েকটি। তবে বই বিক্রির প্রচারণা শুরু হয়েছে গত অক্টোবর নভেম্বর থেকে। গত কয়েক বছর ধরে জননীর এক চেটিয়া দখলে রয়েছে বই বাজার। এক বিক্রেতা দাবি করেন, ৭০ শতাংশ দখলে রয়েছে জননী প্রকাশনীর হাতে। তাল মেলাতে না পারলেও লেকচার অনেকটা এগিয়ে। এক সময় সাড়া জাগানো পাঞ্জেরী ও অনুপম পেছনের সারিতে।
আরও জানা যাায়, দুই থেকে আড়াইশো শিক্ষার্থীদের জন্যে একটি স্কুলকে সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা অনুদান বা উপঢৌকন দেয়া হয় জননী প্রকাশনীর পক্ষ থেকে। স্কুলগুলো ওই টাকা শিক্ষকদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। অনেক স্কুলের পক্ষ থেকে আগেভাগেই প্রকাশনার সাথে যোগাযোগ করে বলেও জনান কয়েকজন।
জননী প্রকাশনীর মালিক পক্ষের জসীম উদ্দিন স্বীকার করেন, অতীতে প্রশ্ন করতে স্কুলপ্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা নেয়া হতো। প্রশ্ন তৈরি করতে যা খরচ ততটুকু নেয়া হয়।
যশোর উপশহর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া শিরিন জানান, তারা কোনো নির্দিষ্ট গাইডের কথা উল্লেখ করেন না। ছাত্রী ও অভিভাকরা যেটা ভালো মনে করবেন সেটা কিনবেন। গ্রামার বরাবরই তারা অ্যাডভ্যান্স পড়ান। সিলেবাস জননীর কাছ থেকে পেয়ে থাকেন, সেটা জননী প্রকাশনী তাদের নিজেদের প্রচারের জন্যে দেয়। গত বছর পর্যন্ত বোর্ডের প্রশ্ন ব্যাংক থেকে প্রশ্ন নিয়েছেন, এ বছর যা সিদ্ধান্ত হয় তাই করবেন। যদি স্কুল শিক্ষকদেরকে প্রশ্ন করতে হয় তবে তিনি প্রত্যেক প্রশ্নকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনটি সেট প্রশ্ন নেবেন এবং নিজে বাছাই করে শেষ মুহূর্তে একটি সিলেক্ট করবেন।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির যে অংশে তার স্কুলসহ তারা আছেন ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিস)-এর সাথে। সমিতি কিছু তাদের চাপিয়ে দেয় না, নিজেদের জন্যে সমিতি করেন।
উপশহর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঈন উদ্দীন জানান, তিনি তার স্কুলের শিক্ষকদের সাথে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির যশোরের সভাপতি তীরের হাট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের গ্রুপে আছেন।
সততার সাথে স্কুল পরিচালনা করতে চান। এতদিন প্রশ্ন ব্যাংক থেকে প্রশ্ন নেয়া লেগেছে। এবার যদি স্কুল শিক্ষককে প্রশ্ন করতে হয় শিক্ষকদের সাথে আলাপের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবেন।
কোনো প্রকাশনীর বই চালাবেন কিনা তা স্কুল শিক্ষক ও সমিতির সাথে আলোচনা ভিত্তিতে নেবেন। তবে তিনি এটাও জানান, তার স্কুলে শিক্ষার্থী একটু কম,সম্ভবত নিজেরা প্রশ্ন করবেন। অবশ্য জননী গ্রুপের সিলেবাস পেয়ে থাকেন বলেও জানান।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির যশোর জেলার একাংশের সম্পাদক সিদ্দীন আউলিয়া (রহ.) স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক সামিউল আলীম জানান তাদের অংশের সভাপতি চুড়ামনকাটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান। তাদের সাথে রয়েছে ৩৫টি স্কুল। ততার কোনো প্রকাশনীর টাকা নিয়ে বই সিলেক্ট করেন না। তবে গ্রামারের ক্ষেত্রে অ্যাডভ্যান্স সিরিজের বই পড়ান। তিনি আরো জনান, অন্যদের মতো তারা টাকা বা অন্য সুবিধা নিয়ে বই চালান না।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির যশোর জেলার একাংশের সভাপতি তীরেরহাট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, দেড় শতাধিক স্কুল তার সাথে সমিতিতে আছে।
যা করেন, স্কুল প্রধান শিক্ষকদের সাথে আলাপ আলোচনা ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন। কোনো প্রকাশনীর কাছ থেকে টাকা নেন না। শিক্ষাথর্থীদের জন্যে যে বই ভালো সে বই ব্যবহার করেন। নির্দিষ্ট কারো প্রচার দেন না। তিনি আরও জানান, এখনো বোর্ড বই সব শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়নি. গাইড বা সহায়ক পুস্তকের প্রশ্ন তো আরো পরে।
জননী প্রকাশনীর পক্ষে জসীম উদ্দিন জানান, যতটা প্রচার আমাদের বিরুদ্ধে আসলে তা নয়। আমরা ভালোমানের বই প্রকাশ করি, বাজারজাত করার জন্যে অবশ্যই স্কুলগুলোতে প্রচারে যেতে হয়, শিক্ষক সমিতির সাথে কথা বলতে হয়। কখনো কখনো শিক্ষকদের পিকনিক অথবা স্কুল পিকনিকে সৌজন্যমূলকভাবে কিছু করতে হয়। এগুলো প্রচার ও বাজারজাতকরণেরই একটি পদ্ধতি। কিন্তু সরাসরি শিক্ষকদেররকে টাকা দিতে হয় না।
তিনি আরও বলেন, সরকার সকল ক্লাসের বই ফ্রি দেয়া শুরুর পর থেকে বইয়ের সে ব্যাপক বাণিজ্য ও লাভের বিষয়টি নেই। আগে আমরা ক্লাসের বইও বিক্রি করতাম, একই সাথে সহকারী পুস্তকও বিক্রি করা হতো। এখন তো শুধু গ্রামার ব্যাকরণে সীমাবদ্ধ। গাইড এখন ততোটা চলে না। কোচিংসহ নানা কারণে অনেকেই বই কেনে না। আর সিলেবাস বা প্রশ্ন একসাথে তৈরি করলে খরচ কম, ফলে একটু কম অর্থনৈতিক শক্তিশালী স্কুলগুলোতে কম টাকায় প্রশ্ন দেয়া হতো, এতে স্কুলেরই সুবিধা।
গত তিন বছর তো শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্ন ব্যাংক থেকে প্রশ্ন নিতো স্কুল, আমাদের কাছ থেকে তখনতো কেউ প্রশ্নই নেয়নি। এবার এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, প্রশ্ন ব্যাংক থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ হবে, না কি স্কুল শিক্ষকরা প্রশ্ন করবেন সে বিষয়ে।
আরও পড়ুনঃ মাসব্যাপি কোরআন বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করলো এপেক্স ক্লাব অব পটিয়া
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.