মালিকুজ্জামান কাকাঃ আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির যশোর জেলা শাখার সম্মেলন। সম্মেলন সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন দলের নেতারা। একই সাথে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীরা। প্রতিদিনই হচ্ছে প্রচার মিছিল।
মঞ্চ নির্মাণ, সাজসজ্জায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতারা। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সম্মেলন স্থান পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ। তারা মঞ্চ নির্মাণের অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয় খোঁজ খবর নেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি টাউন হলের জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মহা সচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এখানেও পদ প্রত্যাশী জেলা নেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ১০ বছর পর ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল যশোর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী অধ্যাপক নার্গিস বেগম আহ্বায়ক এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু সদস্য সচিব হন।
ঐ কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হলেও পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ৬ বছর।
নির্বাচনের মাধ্যমেই গঠিত হতে যাচ্ছে যশোর জেলা বিএনপির কমিটি। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের ৩টি পদে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি শনিবার আলমগীর সিদ্দিকী হলে বেলা ২ টা থেকে বিকেলে ৫ টা পর্যন্ত ভোট।
মোট ভোটার ১ হাজার ৬শ ১৬ জন।
এরআগে রোববার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসিচব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের নাম প্রকাশ হয়। কমিটির আহবায়ক অ্যাড. মো. ইসহক। সদস্য অ্যাড. হাজী আনিছুর রহমান মুকুল, অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন, ডা. এস.এম রবিউল আলম ও সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সজল।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জেলা বিএনপি কার্যালয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভা শেষে তফসিল ঘোষণা করেন আহ্বায়ক অ্যাড. মো. ইসহক। গতকাল সকালে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত খসড়া ভোটার তালিকার ওপর আপত্তি গ্রহণ ও শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এ দিন সন্ধ্যা ৭টায় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
আজ বুধবার সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিক্রি, বেলা ১২ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত জমা এবং বেলা ২ টা থেকে ৩ পর্যন্ত যাচাই বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
এদিন সন্ধ্যা ৬ টায় চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ এবং সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা যাবে। মনোয়নয় ফরম সংগ্রহের সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৫০ হাজার টাকা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৩০ হাজার টাকা (অফেরৎযোগ্য) জমা দিতে হবে। জমাদানের সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং মনোনয়ন ফরম ক্রয়ের মূল রশিদ সংযুক্ত করতে হবে।
উপজেলা এবং পৌর বিএনপির কোন নির্বাহী পদে থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হলে উক্ত পদ থেকে পদত্যাগ করে তার কপি মনোনয়ন ফরমের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।
বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হামলা-মামলার ভয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে অনুপস্থিত ছিলেন অনেকে। শীর্ষনেতারা বলছেন, এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-নিপীড়নের মধ্যে আন্দোলন ও কমিটি গঠন ঝিমিয়ে পড়ে। গত বছর ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিতে থাকেন। সেই থেকে প্রায় প্রতিদিন ছোট-বড় বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান রয়েছে দলটির। এরই মধ্যে আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব পর্যায়ে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
ইতিমধ্যে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. ইসহককে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, আইনজীবী আনিসুর রহমান মুকুল, অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন, চিকিৎসক এসএম রবিউল আলম ও সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সজল।
সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দ উৎসব বিরাজ করছে। সভাপতি পদে একক প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী অধ্যাপক নার্গিস বেগম। সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। সম্মেলনে ১৬১৬ জন কাউন্সিলর ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।
দলীয় সূত্র মতে, কঠিন সময়ে দলকে ধরে রাখার পুরস্কার হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হতে যাচ্ছেন অধ্যাপক নার্গিস বেগম। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আর কেউ থাকছেন না। তবে তিনি স্বেচ্ছায় সভাপতি না হতে চাইলে সেক্ষেত্রে সভাপতি পদে একাধিক প্রার্থী লড়বেন। সাধারণ সম্পাদক পদ ঘিরে আছে আলোচনা।
সাধারণ সম্পাদক হবার জন্য চার নেতা মাঠে রয়েছেন। তারা বর্তমান সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, মিজানুর রহমান খান এবং যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মারুফুল ইসলাম মারুফ।
এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট হাজী আনিসুর রহমান মুকুল, নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, রবু বারী হুদা ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন সম্মেলন ও কমিটি গঠন না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী নেতারা হতাশ হয়ে পড়েন। বিগত সরকারের আমলে হামলা-মামলার ভয়ে দলীয় কর্মকান্ডে অনুপস্থিত থাকেন অনেকে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। অংশ নিতে থাকেন দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।
জেলার শীর্ষনেতারা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে ভোটের মাধ্যমে উপজেলা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগের আমলে পুলিশি বাধায় কমিটি গঠন করা যায়নি অনেক উপজেলায়। আওয়ামী লীগের পতনের পর অসম্পন্ন উপজেলা কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু জানান, আগামী ২২ ফ্রেরুয়ারি জেলা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। দল চাইলে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হবো। বিগত দিনে অনেক হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। ভোটাররা অবশ্যই তাকে মূল্যায়ন করবেন।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন জানান, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে তিনি মাঠে থাকবেন।মিজানুর রহমান খান ও মারুফল ইসলামও দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।
যশোর জেলা বিএনপির কাউন্সিলের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক মো. ইসহক জানান, নির্বাচনের তফসলি ঘোষণা করা হয়েছে। সমঝোতা না হলে ভোট ব্যালটে গড়াবে। ভাল একটি কমিটি দেখতে ২/৩টি দিন ধৈর্য ধরতে হবে।
আরও পড়ুনঃ সরকারে থাকার খায়েশ থাকলে, পদত্যাগ করে নির্বাচনে আসুন।
Leave a Reply