নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর মান্দায় ৬৯ নং কালিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ফজলে খোদার বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকার প্রতি অবমানা করা,জাতীয় শ্লোগান জয় বাংলা না বলা,বঙ্গবন্ধু কর্ণারের বইগুলো আলমারির ভিতর চাবি দিয়ে রাখাসহ বিভিন্ন অনিয়ম,দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব কারণে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মতিন শারিরিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফজলে খোদা স্কুল সংস্কার, শিক্ষা উপকরণ ক্রয়সহ সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন।
এছাড়া তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। তার স্বেচ্ছাচারীতার কারণে অনেক অভিভাবক বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানদের অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন।’ প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়ম,দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, সহকর্মী এবং ছাত্র-ছাত্রীরা। অতিদ্রুত বদলীসহ তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান স্থানীয়রা।
কালিনগর গ্রামের গোলাম মোস্তফা এবং নজরুল ইসলামসহ আরো অনেকে জানান, কালিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক একজন জামায়াত শিবিরের সমর্থক।
এজন্য তিনি জাতীয় দিবসগুলোতে জয় বাংলা না বলে,নারায়ে তাকবির,আল্লাহু আকবার বলে থাকেন। এছাড়াও জাতীয় পতাকা, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির প্রতি অবমানা করা (পুরাতন জাতীয় পতাকা দিয়ে ব্রেঞ্চ পরিস্কার করে তা ডাস্টবিনে রাখা) ,বঙ্গবন্ধু কর্ণারের বইগুলো সড়িয়ে আলমারির ভিতর চাবি দিয়ে রাখা, শিক্ষার্থীদের সাথে অসালীন আচরণ করা, অমানবিভাবে নির্যাতন করা,বিদ্যালয় কক্ষে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বকভাবে প্রাইভেট পড়ানো, বিদ্যালয়ে একবছর যাবৎ সাব-মার্সিবল পাম্প সংস্কার না করায় পানি সংকট তৈরী করা,প্রায় দুই বছর যাবৎ পিটিএ এবং এসএমসি মিটিং না করা,ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অদ্যবধি কোন জাতীয় দিবস সঠিকভাবে পালন না করা, দীর্ঘ ছয় মাস যাবৎ একদিনও ক্লাস না করে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করা, প্রতিষ্ঠানের পুরাতন ভবনের টিন এবং আম গাছের আম নিজে বিক্রি করে অন্যের উপর দোষ চাপানো, সমাবেশে শপথবাক্য পাঠ করার নতুন পরিপত্র আসার ছয় মাস পর তা বাস্তবায়ন করা, সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ১০ কেজি ব্লিচিং পাউডার কোনরকম ব্যাবহার না করে ফেলে দেয়াসহ সহকর্মীদের কে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর জন্য পায়তারা চালিয়ে থাকেন।
তার এসব উদ্ধৌত্বপূর্ণ আচরণের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।’
তাদের দাবি যে,‘২০১৫ সালে তিনি এ স্কুলে শিক্ষক হিসেবে আসার পর থেকে বিদ্যালয়ে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।
শিক্ষকদের সাথে স্বমন্বয়হীনতার কারণে ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা ব্যাবস্থা। এছাড়াও অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা নিয়ে তার গেছে গেলে তিনি তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে থাকেন। তার আচরণে সবাই অতিষ্ঠ।
সম্প্রতি সেলিম মর্তুজা নামের একজন দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় তার প্রতি এলাকাবাসীর ক্ষোভ আরও বেড়ে গেছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার কোনো মানুষই তাকে আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দেখতে চান না।’
ভূক্তভোগী সহকারী শিক্ষক সেলিম মর্তুজা বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে অদ্যবধি বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে আসছেন।
সংশ্লিষ্ঠ অফিসের কর্মকর্তা এবং শিক্ষক সমিতির নেতাদের প্ররোচনায় বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ফজলে খোদা এসব অনিয়ম করার সাহস পায় বলে জানিয়েছেন তিনি।
তার এসব অনিয়ম,দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় তাকে বিভিন্নভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে চান তিনি।’
অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ফজলে খোদা বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির সঙ্গে তার বিরোধ হওয়ার কারণে স্লিপের টাকা তুলতে না পারায় সংস্কারকাজগুলো ব্যাহত হচ্ছে।
তবে জাতীয় পতাকার সঙ্গে অবমাননা করার বিষয়টি সঠিক নয়। আর তিনি জামায়াত শিবিরের সঙ্গেও সম্পৃক্ত নয় বলে জানান।
অপরদিকে আম গাছের আম এবং টিন বিক্রয়ের টাকা আত্মসাৎ এর বিয়ষটি এড়িয়ে যান। তবে, বঙ্গবন্ধু কর্নারের বইগুলো সড়িয়ে রাখা এবং জাতীয় শ্লোগান জয় বাংলা না বলে; নারায়ে তাকবির,আল্লাহু আকবার বলার বিষয়টি শিকার করে তিনি বলেন যে, জয় বাংলা না বলে আল্লাহু আকবার বলে বলে অভ্যস্থ হয়ে গেছি সেজন্য আল্লাহু আকবারই বলি। আর রমজানের ছুটিতে বঙ্গবন্ধু কর্নারের বইগুলো আলমারিতে তালা দিয়ে রেখেছি,এতে দোষের কি!’
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মতিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি শারিরিকভাবে অনেক অসুস্থ, সেকারণে এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারছি না।
মান্দা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাসার মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘ জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা এবং জাতীয় শ্লোগান জয় বাংলা না বলে; নারায়ে তাকবির,আল্লাহু আকবার বলার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’
মান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মামুনুর রশিদ বলেন, ‘ জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা এবং জাতীয় শ্লোগান জয় বাংলা না বলে; নারায়ে তাকবির,আল্লাহু আকবার বলার বিষয়টি সন্দেহজনক।
তার ধারনা যে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ফজলে খোদাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসাতে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। তবে, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান তিনি।
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাজিদা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ হাসিম মিয়া
(টিটু)
সহকারী বার্তা সম্পাদক:
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2024 দশানী ২৪. All rights reserved.