বিশেষ প্রতিবেদক
অমর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
অমর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
যাঁদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সেই সব শহীদের প্রতি কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে জাতি। অমর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে আজ রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বাসস জানিয়েছে, ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা বাজার ৬ মিনিট আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পৌঁছান। এর কিছুক্ষণ পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছান।
অমর একুশের ঐতিহাসিক অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি... আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি বাজানোর সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ধীরলয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদির দিকে এগিয়ে যান।
রাষ্ট্রপতি প্রথমে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। রাষ্ট্রপতির পরপরই প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁরা।
এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাছবি: বাসস
পরে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, তিন বাহিনীর প্রধানরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়ার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। প্রথমেই তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির প্রাণের মাতৃভাষা বাংলা উপেক্ষা করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু এ দেশের বীর সন্তানেরা তাজা রক্ত দিয়ে শাসকগোষ্ঠীর এই অপচেষ্টাকে রুখে দেন।
১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ঢাকায় শাসকগোষ্ঠীর জারি করা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল বের করেন ভাষার জন্য লড়াইরত এ দেশের ছাত্র-জনতা। কিন্তু বর্বর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ মিছিলে গুলি চালালে সালাম, বরকত, রফিক, সফিউর, জব্বারসহ নাম না–জানা অনেক বীর সন্তানের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। এরপর ১৯৫৬ সালে এ দেশের মানুষের প্রাণের ভাষা, মায়ের ভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এ জন্য জাতি প্রতিবছর কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে সেসব ভাষাশহীদের। আজ সেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। আজ শ্রদ্ধার ফুলে ভরে উঠছে দেশের শহীদ মিনারগুলো। সবাই গাইছেন অমর গান ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি...।’
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এ জন্য এখন বাংলাদেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বেই অমর এই দিন পালিত হয়। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়াও আজ বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।
দিনটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। তবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির যথাযথ চর্চা ও সংরক্ষণে আরও যতœবান হতে হবে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে বর্তমান প্রজন্মকে বাংলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত বিভিন্ন ভাষার ওপর প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে গত ১৪ বছরে বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছি। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, যা স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজব্যবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে অর্জিত হবে।’
আরও পড়ুনঃ রাত পোহালেই অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.