নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে হঠাৎ প্রতিবন্ধী ভাতা বন্ধ হয়েছে। তাদের ভাতার টাকা যাচ্ছে অন্যের মোবাইলের একাউন্টে। প্রতিবন্ধীরা নিয়মিতই ভাতা পেয়ে থাকলেও হঠাৎ গত ৫ মাস থেকে বন্ধ হয়েছে তাদের ভাতার টাকা। সরকার থেকে ভাতার টাকা দেওয়া হলেও যাচ্ছে না তাদের নগদ অ্যাকাউন্টে। তাদের নম্বর পরিবর্তন হয়ে অন্য নম্বরে অন্যের মোবাইলে যাচ্ছে ভাতার টাকা। এ নিয়ে প্রতিদিন উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ভিড় করছেন ভুক্তভোগী ও তার স্বজনরা। সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর পাননি ভুক্তভোগীরা।
নিজের নামের নগদ অ্যাকাউন্টে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ওয়েবসাইটে অন্যের মোবাইল নম্বর দেখে অনেকে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এমন অভিযোগ উঠেছে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সমাজসেবা অফিসের বিরুদ্ধে।
দূরদূরান্ত থেকে ভাতাভোগীরা সমাজসেবা অফিসে আসলেও টাকা ফেরত পাবে কিনা এর কোনো সুরাহা করতে পারছেন না অফিস কর্তৃপক্ষ। তবে এ বিষয়ে সমাজসেবা অফিস বলছে- সুবিধাভোগীদের নগদ অ্যাকাউন্ট নগদ এজেন্টের লোকজন করেছেন। সেখানেই হয়তো ভুল নম্বর এট্রি করেছিলেন। যার কারণেই এমন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী ভাতার সুবিধাভোগী পঞ্চাশ বছর বয়সী নারী জহুরা হাসিনা। বিশ বছর আগে ডান পায়ের মাংসে পচন ধরায় সেটি কেটে ফেলতে হয়। সেই থেকে প্রতিবন্ধিতা যোগ হয় তার জীবনে। পরে স্বামী অন্যত্র বিয়ে করায় নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মেয়েকে নিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারি সুযোগ–সুবিধা ও মেয়ের টিউশনি করানো টাকায় চলে তাদের সংসার।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পোল্যাকান্দি গ্রামের জহুরা হাসিনা বেগমের সঙ্গে কথা হয় দশানী ২৪ ডটকম এর প্রতিনিধির। এ সময় তিনি জানান, প্রায় ছয় মাস থেকে তিনি প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা পাচ্ছেন না। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ২ হাজার ২৫০ টাকা মোবাইলের নগদে পেয়েছেন তিনি। এরপর গত জুন মাস থেকে ওই মোবাইল নম্বরে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা পাননি। উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে যোগাযোগ করা হলে তাকে জানানো হয় নিয়মিতই প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা যাচ্ছে জহুরা হাসিনার মোবাইল নম্বরের নগদ অ্যাকাউন্টে।
জহুরা হাসিনার মতো ঝালোরচর এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রভাকর শীল, পোল্যাকান্দি গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী দুলালীসহ অনেক সুবিধাভোগী এমন পরিস্থিতির স্বীকার। অসহায় এসব মানুষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম ভোগান্তিতে দিন যাপন করছেন।
ঝালোরচর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রভাকর শীল জানান, জুন মাস থেকে তিনি ভাতার টাকা পাচ্ছেন না। এর আগে ঠিকমতো পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সমাজ সেবা অফিসে যোগাযোগ করেন তিনি। অফিস থেকে তাকে জানানো হয়েছে যে তার ভাতার টাকা নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে। তবে যে নম্বরে ভাতার টাকা দেওয়া হয় সে মোবাইল নম্বর তার দেওয়া নয়। নম্বরটি অন্যজনের।
প্রতিবন্ধী জহুরা বেগম বলেন, বিগত বছর তাঁর প্রতিবন্ধী ভাতার ৬ হাজার ৭৫০ টাকা অন্য নম্বরে চলে যায়। পরে সমাজ সেবা অফিসে গিয়ে নম্বর পরিবর্তন করে দেন তিনি। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত পরিবর্তনকৃত নম্বরে টাকা পান। হঠাৎ করে আবারও তাঁর নম্বরে টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়।
সদর ইউনিয়নের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আব্বাস আলীর বাবা নুর মোহাম্মদ জানান, গত জুন থেকে তাঁর ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা পাচ্ছেন না। সমাজ সেবা অফিস বলছে নিয়মিতই টাকা যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সমাজসেবা অফিসে তার নামের সাথে তাদের দেওয়া মোবাইল নম্বরের মিল নেই।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিস বলছে, এ উপজেলায় ২ হাজার ৯১৯ জন প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীকে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা এবং ৭৩৫ জন প্রতিবন্ধীকে শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। তাদের সবার মোবাইল ফোনে নগদের মাধ্যমে ভাতার টাকা নিয়মিত যাচ্ছে। কেবল যারা অন্যের নম্বর ব্যবহার করেছেন তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জয় কৃষ্ণ সরকার বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা না পাওয়ার ঘটনায় আমি নিজেও দুঃখিত। এ সমস্যা নিয়ে আমার অফিসে ১০–১৫ জন প্রতিবন্ধী যোগাযোগ করেছেন। আশা করছি জানুয়ারি থেকে যেকোনো ভাতার বেলায় এমন হবে না। সমস্যা নিরসনে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
আরও পড়ুনঃ লামা সাংবাদিক ফোরামের নির্বাচন সম্পন্ন সভাপতি ইউছুপ, সম্পাদক নুর মোহাম্মদ ও সাংগঠনিক হাসেম
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাজিদা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ হাসিম মিয়া
(টিটু)
সহকারী বার্তা সম্পাদক:
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2024 দশানী ২৪. All rights reserved.