এ,কে,এম নুর আলম নয়ন, স্টাফ রিপোর্টারঃ
মমিনূর রশীদ মিল্লাত একাধিক নাট্যকার ও নাট্যপরিচালক। যার নাটক দেখেনি এমন লোক পাওয়া বিরল।
নামটা শুনলেই একবাক্যে যাকে স্মরণ করে দেয় বিটিভি, চ্যানেল আই। বিটিভিতে ১০০ পর্বের ধারাবাহিক নাটক প্রচার একটা বিরল ঘটনা। নাট্যকার মানেই মমিনূর রশীদ মিল্লাত। কাহিনীকে এমনভাবে সজীব ও প্রাণবন্ত করে তুলেন যে নাটক দেখতে দেখতে কোথায় যেন হারিয়ে যায় দর্শক।
এক সময়ের প্রখ্যাত নাট্যকার ও নাট্যপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রধান সহকারী ছিলেন। আব্দুল্লাহ আল মামুন মারা যাবার পর তিনি নিজেই নাটক তৈরীতে মনোযোগী হন। নাট্যপরিচালনায় তিনি সিদ্ধহস্ত।
নাটক পরিচালনায় যেন তাঁর ধ্যান, জ্ঞান। বর্তমান সময়ে এমন একজন গুণী মানুষকে পাওয়া ভার। হঠাৎ করে তাঁর সাথে দেখা এবং একটি সাক্ষাৎকার নিতে বলতেই তিনি রাজী হয়ে যান।
বর্তমান সময়ের নাটক ও পরিবেশ পরিস্থিতির বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে তার সাথে আলোচনা হয়। আমরা জানি, তার একটি ডকুমেন্টারি শুধু বাংলাদেশে নয় আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। “একুশ শতকের বাংলাদেশ” নামে ডকুমেন্টারি আজ বাংলাদেশে এক অভাবনীয় একটি বিষয়।
তাই তাঁর সাক্ষাৎকারটি মূলতঃ এটি নিয়েই।
প্রশ্ন: অনেক দিন পর দেখা। আপনি কেমন আছেন?
উত্তর: জ্বী ভাই, আমি ভালো আছি।
প্রশ্ন: আপনার নাটকের কি খবর বলেন?
উত্তর: নাটক আপাতত পরিবেশ পরিস্থিতির জন্য স্থগিত রেখেছি।
আর যেহেতু দীর্ঘ ২টি বছর করোনা আমাদের সবাইকে গ্রাস করেছিল। সেজন্য নাটক নিয়ে বেশি চিন্তা করিনি। এখন আবার চিন্তা করছি আগামী জানুয়ারি থেকে আরম্ভ করবো। বলতে পারেন ২০২৩ সাল থেকে নিয়মিত নাটক লিখব।
প্রশ্ন: জানুয়ারি থেকে কোন বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করছেন? একটা নাটক নিয়ে মানে একটা ডকুমেন্টারি নিয়ে যে কাজ করছেন তার খবর কি? এই ডকুমেন্টারি করার আপনার কি উদ্দেশ্য ছিল, কোন আঙ্গিকে এবং কাকে নিয়ে এতো সুন্দর একটি ডকুমেন্টারি করছেন।
বলবেন কি?
উত্তর: ভালো কথা বলেছেন। জনাব সিরাজুল আলম খান একদিন আমাকে বললেন যে, ‘তুমি একটা ঐতিহাসিক ডকুমেন্টারি কর’। একথা বলে তিনি দীর্ঘ ০৬ মাস পরে লন্ডন থেকে ফিরে এসে আমাকে একটি বই দেন।
বইটির নাম “একুশ শতকে বাঙালি”। বইটি তিনি আমাকে তুলে দিয়ে বললেন, এটার একটা চিত্রনাট্য তৈরী কর। অবশ্য চিত্রনাট্য রূপ দিতে হলে আমাকে বইটি পড়তে হবে ভালো করে। বইটি পড়তে গিয়ে কিছু কিছু জায়গায় একটু সমস্যা হলো।
তাই আমাকে ভালো করে পড়ে বুঝতে হবে বিধায় চলে গেলাম বিশ^সাহিত্য কেন্দ্র, পাবলিক লাইব্রেরিতে। বিভিন্ন বই সংগ্রহ করে পড়তে লাগলাম। আমাকে জানতে হবে সেই সময়ের ইতিহাস বা সেই সময়ের ঘটনাবলি। তাই আমি প্রচুর বই সংগ্রহ করতে থাকি।
যদিও এই বইটিতেই ইতিহাস পরিপূর্ণভাবে রয়েছে। তাই আমি অনেকগুলো বই পড়ে জেনে আমি উনার বইটি নিয়ে চিত্রনাট্য তৈরী করতে বসি এবং ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে একটা খসড়া দাঁড় করি।
তখন সিরাজুল আলম খান এটা দেখে তিনি পছন্দ করেন এবং বলেন, চলো এখন সুটিং এ চলে যাই। তখন তিনি আমাদের ফিরোজ হান্নান, যিনি স্ট্যাম্পফোর্ডের মালিক। তিনি প্রথম প্রডিউসার ছিলেন রূপান্তর বাংলাদেশ।
২৪ পৃষ্ঠার মানে ২৬ পৃষ্ঠার একটার ডকুমেন্টারি তৈরী করি। তারপর ওনাদের সবারই ভালো লাগল। এরপর আমি “একুশ শতক বাংলাদেশ” নামে ডকুমেন্টারি তৈরী করি।
তৈরী করার পরও আমার মনমতো হলো না। আর হলো না বিধায় আমি নিজেই এনিমেশন গ্রাফিক্স দিয়ে ৬০ মিনিটের “একুশ শতকের বাংলাদেশ” নামে একটা ডকুমেন্টারি তৈরী করি। আমার জানামতে এটাই প্রথম এবং বাংলাদেশের একটা ঐতিহাসিক দালিলিক হিসাবে প্রমাণিত একটি ডকুমেন্টারি।
যেখানে রাজা ধনতন্ত্র থেকে আরম্ভ করে বঙ্গবন্ধু পর্যন্ত এবং পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত একেকজন প্রেসিডেন্ট এসেছিল তার ধারাবাহিকতা নিয়ে এনেছি তাতে। আর ঐদিকে পাল বংশ, অশুকের রাজত্ব, সেন বংশ, সুলতানি আমল, আইয়ুবি আমল, সব ধারাবাহিকতায় তুলে ধরি।
জনপথ থেকে একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ নিল ডকুমেন্টারি। সুলতালি আমল, হুসেন সাহেব আমল এবং বাংলাভাষাটা কিন্তু হুসেন শাহী আমলেই প্রাধান্য পেয়েছে। হোসেন শাহীর আমলে বাংলা ভাষাটা রাজকীয় ভাষায় পরিণত করেছে। এই সব নিয়েই আমার “একুশ শতকের বাংলাদেশ”।
প্রশ্ন: আর একটি প্রশ্ন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আগের যে কালিকুলাম মানে প্রস্তুতি সেটা একুশ শতকের বাংলাদেশে আছে?
উত্তর: অবশ্যই আছে। একুশ শতকের আগের যে নয় বছর এবং স্বাধীনতার নয় মাসের যুদ্ধের পরে যে সময়টা অর্থাৎ নয় বছর আগে ১৯৬২ সালে নিউক্লিয়াস নামে সিরাজুল আলম খান গঠন করেছিলেন গোপনীয়ভাবে। আগে গোপন একটা সংগঠন দরকার আছে তাই।
এটা দ্বিতীয় ধারার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম দরকার। দ্বিতীয় ধারার প্ল্যাটফর্ম যেভাবে সুভাষ চন্দ্র বসু দ্বিতীয় ধারার প্ল্যাটফর্ম তৈরী করে এগিয়েছিল।
সবচে বড় ব্যাপার হলো ১৯৫৭ সালে যে সিপাহী বিপ্লব হয় এই সিপাহী বিপ্লবের পর থেকে পূর্ব বাংলায় বাংলা ভাষাভাষি অঞ্চলগুলোতে দ্বিতীয় ধারার রাজনীতির যে প্ল্যাটফর্ম তৈরী হয় এবং ঐ আলোকেই সিরাজুল আলম খান গোপন সংগঠন তৈরী করেন। নিউক্লিয়াস, বিএলএফ, জয়বাংলা বাহিনী, স্বাধীন সংগ্রাম পরিষদ এগুলোর সবকিছুই আছে নিউক্লিয়াসে।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কথা বলবেন কি?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের সময়ে উনার জয় বাংলা, মুক্তিবাহিনীতে ওনার যে ভ‚মিকা ছিল তা মনে রাখার মত।
সিরাজুল আলম খান, ফজলুল হক মণি, তোফায়েল আহম্মেদ, আবদুর রাজ্জাক ওনারা ছিলেন মুজিব বাহিনীতে এবং মুজিব বাহিনীর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে মুজিব বাহিনীকে কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীও সাপোর্ট করেছিলেন এমনকি লিখিতভাবে।
তারপরে এই মুজিব বাহিনী কিন্তু যতটা প্রবাসী সরকার গঠন করে সিরাজুল আলম খানের প্রভাব ছিল অনেক চোখে পড়ার মতো। তাজউদ্দিন আহমেদ এর কিছু লোক ছিলেন, তখন সিরাজুল আলম খান ও ফজলুল হক মণি উনারা সম্মিলিতভাবে সাপোর্ট করেন প্রবাসী সরকার গঠন করার।
এভাবে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয় এবং আর একটা বিষয় ১১ সেক্টর কমান্ডারের প্রধান জেনারেল আতাউল হক ওসমানী। এটাও কিন্তু নিউক্লিয়াসের উৎপাদন। নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে সেই সময় জাতীয় পতাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে ইশতেহার পাঠ করা হয়েছে শাহজাহান সিরাজের মাধ্যমে, জয় বাংলা ধ্বনি হয়েছে নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে এবং সিরাজুল আলম খানই প্রথম জয়বাংলা কে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জয়বাংলা শ্লোগান প্রতিষ্ঠিত করেন।
জয়বাংলা শ্লোগান প্রথমে দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু’র উপস্থিতিতে। তারপর জয়বাংলা শ্লোগানকে কিন্তু আওয়ায়ী লীগের অনেক নেতাই পছন্দ করেননি একমাত্র বঙ্গবন্ধু ব্যতিত।
বঙ্গবন্ধু যে দিন বাংলাদেশের নামকরণ করেন সেদিন সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ওনার বাসায় যান। যাওয়ার পর তখনই বঙ্গবন্ধু এর নামকরণ করে “বাংলাদেশ”। যদিও তাদের মনের মধ্যে এটাই ছিল।
ফলে শুনে তারা আনন্দিত হয়ে গেছে যে আমাদের মনের মধ্যে যে চিন্তাটা লুক্কায়িত ছিল সেটা মিলে গেছে। তাতে বুঝা যায় বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় ধারার রাজনীতিতেও পছন্দ ছিল।
প্রশ্ন: একুশ শতকের বাংলাদেশ নামে যে চিত্রনাট্যটা করে আপনি কি সার্থক? আপনি কি এতে খুশি?
উত্তর: অবশ্যই খুশি, অবশ্যই, অবশ্যই। আর একটি কারণে খুশি যে, আমি বাঙালি জাতিসত্ত¡াকে তিন হাজারের বছরে গাথা জাতিসত্ত¡াকে দেখাতে পেরেছি। এটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র সিরাজুল আলম খান সাহেবের জন্য। ওনার যে এক্টিভিটিজ, ওনার যে মেধা আর কারিশমা ওনাকে দেখে সত্যি আমি আনন্দিত এবং গর্বিত।
স্বাধীনতার পর একজনের পর একজন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, কিন্তু দেশের যে কাঠামোগত পরিবর্তন যা সিরাজুল আলম খান বঙ্গবন্ধু’কে বলে আসছিলেন ১৪ দফার কথা। সেই সময় বঙ্গবন্ধু শেষে বলেছিলেন, ‘সিরাজ আমি তর ১৪ দফা করতে পারছিনারে।
এদের সাথে আমি পারছি না’। বঙ্গবন্ধু’র ইচ্ছা ছিল কুলিয়ে উঠতে পারেননি এইসব চাটুকার আর টাউট বাটবারদের জন্য।
প্রশ্ন: আমরা কি আবার ঐ পথে যাচ্ছি?
উত্তর: যাচ্ছি ভাই। আমি এতোদিনের ধারণা থেকে বলতে পারি যে আমরা কিন্তু ঐ পথের দিকেই যাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত জাতীয় সরকার হবে।
প্রশ্ন: ধন্যবাদ সময় দেবার জন্য।
উত্তর: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন বসত ভিটার সীমানা বিরোধ নিয়ে ঝিনাইগাতী থানায় অভিযোগ
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.