প্রেম -একটি মানসিক রোগের নাম.
তথাকথিত প্রেম নামের জৈবিক আসক্তির কবলে পড়ে কত তরুণ-তরুণী যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জীবনের সম্ভাবনাকে নষ্ট করেছে, নিজের এবং পরিবারের জীবনে বিপর্যয় ডেকে এনেছে তার ইয়ত্তা নেই ।
কিন্তু কেন ? প্রেম মানুষকে অন্ধ করে, প্রেম মানুষকে পাগল করে- এ কথাগুলো অনেকদিন ধরেই ছিলো গল্প-কবিতা-উপন্যাসের কথা ।
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে সম্প্রতি বিজ্ঞানও এই একই সুরে কথা বলছে । ইদানীং নানা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মানসিকভাবে অসুস্থ হলে মানুষের মস্তিষ্কে যে, রাসায়নিক অবস্থা দেখা যায়, প্রেমে পড়লেও সেই একই অবস্থা হয় ।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সংখ্যায় 'লাভ দ্যা কেমিক্যাল রি-একশন' শিরোনামের এক বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় । ইতালির পিসা ইউনিভার্সিটির মনোবিগ্গানের অধ্যাপিকা ডোনাটেল মারাজিতি তার সহকর্মীদের নিয়ে ২৪ জন নারী-পুরুষের ওপর এক জরিপ চালান ।
এদের মধ্যে সবাই গত ৬ মাসের মধ্যে প্রেমে পড়েছে এবং প্রতিদিন অন্তত ৪ ঘন্টা সময় এরা বাস্তবে প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে কাটায়- নয়তো মনে মনে চিন্তা করে । এদের সাথে তুলনা করার জন্যে বেছে নেয়া হয় আরো দুটো গ্রুপ ।
একটি গ্রুপ অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) নামে এক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত । আরেকটি গ্রুপ এই দুটো থেকেই মুক্ত, অর্থাত্ তারা প্রেমেও পড়েনি এবং মানসিকভাবেও অসুস্থ নয় ।
পরীক্ষায় দেখা গেল, প্রেমে পড়া আর মানসিকভাবে অসুস্থ- দুই গ্রুপের মানুষের মস্তিষ্কেই সেরেটনিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শতকরা ৪০ ভাগ কম ।
সেরেটনিন হলো মস্তিষ্কের এমন এক নিউরোট্রান্সমিটার যার পরিমাণ কমে গেলেই বিষন্নতা, অবসাদ, খিটখিটে মেজাজ এবং ওসিডির মতো মানসিক রোগ দেখা দেয় । সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, প্রেমে পড়লেও একই অবস্থা হয় ।
কাজেই যৌক্তিকভাবেই বলা যায়, প্রেমে পড়লে মানুষ আর মানসিকভাবে সুস্থ থাকে না । তার বিচার বুদ্ধি লোপ পায় এবং সে অন্ধ আবেগে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এ আবেগের স্থায়িত্ব আবার খুবই কম । আজকে যাকে না পেলে বাঁচবো না বলে মনে হচ্ছে, বছর না ঘুরতেই মনে হতে পারে যে, তাকে না ছাড়লে বাঁচবো না ।
৬ মাস আগেও যে চেহারাটা দেখার জন্যে অস্থির হতো মন, এখন সে চেহারাটাই হতে পারে সবচেয়ে অসহ্য দৃশ্য ।
এর কারণ কি ? বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এর পেছনে আছে ডোপামাইন নামে এক নিউরোট্রান্সমিটারের ভূমিকা । প্রেমিক বা প্রেমিকাকে দেখলে মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশ এই ডোপামাইন দ্বারা উদ্দীপ্ত হয় ।
এর প্রভাবে শরীর-মনে তখন সৃষ্টি হতে পারে বাঁধভাঙা আনন্দ, অসাধারণ প্রাণশক্তি, গভীর মনোযোগ ও সীমাহীন অনুপ্রেরণা । এ জন্যেই হয়তো যারা সদ্য প্রেমে পড়ে, হঠাত্ করেই তাদের মধ্যে এক ধরনের বেয়াড়া, একগুঁয়ে, দুঃসাহসী চরিত্র ফুটে ওঠে ।
ঘর ছাড়বে, সিংহাসন ছাড়বে, জীবন দেবে; তবু প্রেম ছাড়বে না- এমনই এক বেয়াড়াপনা দেখা যায় তাদের মধ্যে । বিজ্ঞানীরা বলেন, মাদকাসক্তির সাথে এ অবস্থাটার খুব মিল রয়েছে ।
মাদকাসক্তদের কিন্তু মাদক গ্রহণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলে । কারণ মাদকের পরিমাণ যা-ই হোক না কেন ব্রেন তাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে ।
ফলে পরিমাণ না বাড়ালে তার নেশা হয় না । প্রেমের ক্ষেত্রেও তা-ই । তীব্র আবেগের আতিশয্য খুব বেশি সময় ধরে থাকেনা যদি না নতুন নতুন উত্তেজনা দেয়া না যায় ।
কিন্তু বাস্তব জীবনে তো আর তা সম্ভব নয় । ফলে অল্পতেই ঘোলাটে হয়ে যায় আবেগের রঙিন চশমা ।
আসলে স্বর্গীয়, পবিত্র ইত্যাদি নানারকম বিশেষণ যুক্ত করে যে প্রেমকে মহান বানানো চেষ্টা চলে তা যে স্রেফ বংশধারা রক্ষার জন্য নারী-পুরুষের জৈবিক চাহিদারই নামান্তর তা বিজ্ঞানীদের কথায় স্পষ্ট হয়েছে ।
গবেষণায় দেখা গেছে, পারস্পরিক আকর্ষণের ক্ষেত্রে একজন পুরুষ বা একজন নারী অবচেতনভাবেই এমন সঙ্গীকে পছন্দ করে, যে তাকে সুস্থ সবল একটি সন্তান উপহার দিতে পারবে ।
এক জরীপে দেখা গেছে, মহিলাদের কোমর ও হিপের বিশেষ গরন যা তাদের টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন ক্ষমতা বেশি হওয়াকে নির্দেশ করে, তার ওপর নির্ভর করে কে কতটা আকর্ষণীয় হবে ।
আর নারী ও পুরুষের এ দুটো বৈশিষ্ট্যই তাদের সন্তান জন্মদানের সামর্থ্যকে সরাসরি প্রভাবিত করে ।
তাই বিজ্ঞানীদের পরামর্শ, প্রেমের পাগলামিকে আবেগের হাওয়া না দিয়ে ব্রেনের জৈব রাসায়নিক কার্যকরণ হিসেবেই দেখুন ।
তাহলে অন্তত আপনি এ দুর্দশা থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে পারবেন ।
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.